স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের পক্ষে এবং কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিপক্ষে আবদুলের তৎপরতা
-মোস্তাক
হোসেন
আবদুল
গাফফার চৌধূরী এক এক সময় জাতির ক্রান্তিকালে সময় বুঝে কখনো কলমের মুখ দিয়ে কখনো কলমের
উল্টো দিক দিয়ে লেখেন। যেমন ১৯৭৩ সালে সারা বাঙালি জাতি যখন জাতির জনক ও স্বাধীনতার
মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত
বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে নিয়োজিত- আবদুল গাফফার চৌধুরী তখন ব্যস্ত তার কলমকে খগড় বানিয়ে
আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ঘায়েল করতে। আবদুল গাফফার চৌধূরী তখন কলম ধরলেন একাত্তরের
ঘাতক ও দালালদের পক্ষে এবং কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে। এখানে ১৯৭৩ সালের মে মাসে
লেখা গাফফার চৌধুরীর এ সম্পর্কিত রাজনৈতিক কলামের কিছু অংশ ও আজকের কাগজের বিশ্লেষণ
তুলে ধরা হলে।
২২
মে ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ পত্রিকার কলামে আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছিলেন, “আমার দুর্ভাগ্য
আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্থাশীল হয়েও আজ আমাকে এই সরকারের
কোনো কোনো নীতি ও কাজের সমালোচনা করতে হচ্ছে। কোলাবরেটর আইনের অপপ্রয়োগ বাংলার ঘরের
ঘরে হাহাকার তুলেছে। ভাইয়ে ভাইয়ে, বাপে ছেলেতে সন্দেহ ও শত্রুতা সৃষ্টি করেছে এবং স্বাধীনতার
পর যখন অনড় জতীয় ঐক্যের প্রয়োজন, তাকে ভেঙ্গে শতধা বিভক্ত করেছে। কোলাবরেটর আইনকে হাতিয়ার
করে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেনীর লোক রাতারাতি ভাগ্য গড়েছে। .... কোলাবরেটর আইনের অপপ্রয়োগ
দেশের জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করেছে।’ ১৯৭৩ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য
যখন প্রয়োজন ছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে শক্তিশালী করা, সমর্থন
দেয়া তখন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দাবিদার আবদুল গাফফার চৌধুরী তার কলমকে খড়গের মতো
ধরেছিলেন সদ্যপ্রস্ফুটিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশেল মানুষ যখন স্বাধীন
বাংলাদেশের মাটিতে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে ও আইনসম্মতভাবে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার
প্রক্রিয়ার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন আবদুল সেই পুরনো কায়দায় আবার শুরু করলেন, ‘কোলাবরেটর
আইনের অপপ্রয়োগ বাংলার ঘরে ঘরে হাহাকার তুলছে।’ সব সময়ই আবদুল এভাবে লিখে আওয়ামী লীগকে
বিপদে ফেলেছেন এবং বিপদে ফেলে আবার তার পাশে এসে সহানুভুতি জানিয়ে ফায়দা লুটেছেন। ঠিক
যেভাবে ’৭০ ও ’৭১ – এ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়কে ভন্ডুল করার জন্যে আবদুল কলম চালিয়েছিলেন
হামিদুল হক চৌধুরীর পত্রিকায় আহাজারি করেছিলেন ‘মোনায়েম খানের পতনে লাভ কি হলো’ বলে?
ঠিক তেমনি আবার স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে শান্তিতে
ও নির্বিঘ্নে কাজ করতে না পারে তার জন্যে নিজের কল্পনা শক্তি দিয়ে ‘কোলাবরেটর এ্যাক্টের
মাধ্যমে বাংলা ঘরে ঘরে হাহাকার সৃষ্টি করলেন।’ মূলত: আবদুল এক ঢিলে দুই পাখি মারার
কাজে সেদিন কলম ধরেছিলেন। কোলাবরেটর এ্যাক্টকে কার্যকর করতে না দিয়ে আবদুল রক্ষা করতে
চেয়েছিলেন তার পুরনো প্রভু রাজাকার হামিদুল হক চৌধুরীসহ অন্যান্য কুখ্যাত রাজাকারদের
আর অন্যদিকে একাত্তরের ঘাত দালালদের বিচার না করতে পারার দায় দায়িত্ব যাতে পুরোপুরি
আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর সরকারের ঘাড়ে চাপে- তাও নিশ্চিত করা ছিলো আবদুলের এসব লেখার
মূল উদ্দেশ্য। সেদিন এসব আবদুলদের কারনেই মূলত: বিচার করা সম্ভব হয়নি একাত্তরের কুখ্যাত
ঘাতক ও দালালদের। আজো সেই ঘাতক ও দালালদের অপতৎপরতায় বাংলাদেশ ক্ষতবিক্ষত- আজো গোলাম
আযমের মতো কুখ্যাত ঘাতক বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। আবদুলদের মতো কিছু রর্ণচোরা
ও তথাকথিত প্রগতিশীলতার দাবিদারদের আহাজারিতেই সেদিন আওয়ামী লীগ সরকার এক পর্যয়ে বাদ্য
হয়েছিলো ঘাতক ও দালালদের জন্যে সাদঅরণ ক্ষমা ঘোষণা করতে। আর আজ সেই সাধারণ ক্ষমার দায়দায়িত্ব
এককভাবে আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা বাহবা নিতে চাচ্ছে- দায়িত্ব এড়ানোর
সুযোগ পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিত্র সেজে আবদুলের মতো ব্যক্তিদের লেখনিতেউ ঘটেছে আওয়ামী
লীগের জন্যে এই বৈরী পরিবেশ- বিরুপ পরিবেশ। সেদিন বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবও আফসোস করে বলেছিলেন
একটি মিছিলও বের হয়নি একাত্তরে ঘাতক ও দালালদর বিচার চেয়ে- ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের
মতো একটি বিচার পক্রিয়া দাবি করে- যার জন্যে কোলাবরেটর এ্যাক্ট ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি।
আবদুল শুধু কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই সেদিন ক্ষান্ত হয়নি- আওয়ামী
লীগ সরকারের সদস্যদেরকে চরিত্র হননেরও উদ্যোগ নিয়েছেন সেদিন কোলাবরেটর এ্যাক্টকে জড়িয়ে।
তাই তিনি সুস্পষ্টভাবেই সেই লেখায় লিখেছেন, ‘কোলাবরেটর আইনকে হাতিয়ার করে ক্ষমতাসীন
দলের এক শ্রেনীর লোক রাতারাতি ভাগ্য গড়েছে।’............এর চেয়ে জঘন্য অপবাদ আওয়ামী
লীগের নেতা ও সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আর কে দিয়েছেন সেদিন আবদুল গাফফার চৌধুরী ছাড়া?
এটা করে আবদুল একদিকে একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের রক্ষা করেছে বিচার থেকে আর জনগণের
সামনে হেয় প্রতিপন্ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকারকে, বঙ্গবন্ধকে এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য
নেতাদেরকের। বিপর্যস্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপকে – প্রতিটি কর্মকান্ডকে।
তিলকে তাল বানানোর প্রক্রিয়ায় আবদুল সব সময়ই ওস্তাদ লোক এবং সেই তাল বানানোর প্রক্রিয়া
সব সময়ই আবদুল করেছেন তার নিজের হীন ব্যক্তি স্বার্থে, নিজের লাভের জন্যে। ’৭৩-এর স্বাধীন
বাংলাদেশের ঘরের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, গ্রাম-জনপদ ধ্বংস
করার স্মৃতিচিহ্ন এখনো বিদ্যমান কিন্তু আবদুল এসবের মাঝে তখন হাহাকার খুঁজে না পেলেও
হাহাকার খুঁজে পেয়েছেন কোলাবরেটর এ্যাক্টের অপপ্রয়োগের মাধ্যে। এমনকি আগ বাড়িয়ে লিছেলেন,
‘ভাইয়ে ভাইয়ে বাপে ছেলেতে সন্দেহ ও শত্রুতা সৃষ্টি করেছে।’ এরকম পরিস্তিতি তখন কোলাবরেটর
এ্যাক্টকে ঘিরে আদৌ সৃষ্টি হয়নি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। কিন্তু আবদুল লিখেছেন। উদ্দেশ্য
একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের রক্ষা করা- বঙ্গবন্ধুকে আপসেট করা, বিপর্যস্ত করা, অস্পষ্টতায়
রাখা। আবদুল লিখেছেন ‘কোলাবরেটর আইনের অপপ্রযোগ জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করেছে।....’ যা আামাদের
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি এক চরম আঘাত ছাড়া আর কিছু
নয়। ত্রিশ লাশ শহীদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আবদুল কিভাবে বলতে পারলেন
মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকাররা- স্বাধীনতা বিরোধীরা পাশাপাশি অবস্থান করে জাতীয় ঐক্য গড়তে
পারে? আবদুলের দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদররা আজো,
মুক্তিযুদ্ধের মদ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে বিশ্বাস করতে পারেনি- বাংলাদেশের প্রগতি
ও অগ্রগতিতে, অগ্রযাত্রায় সমর্থন দিতে পারেনি। তারা আজো বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর
স্বপ্নে বিভোর – জাতির পতাকাকে তারা খামচে ধরছে- আঘাত হানছে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর- মুক্তিযুদ্ধের
চেতনায় বিশ্ববাসীদের ওপর, প্রগতিশীল ও অসামম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার আদর্শের রাজনৈতিক
নেতার্কিদের ওপর। আজকের বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচারের দাবিতে গণআদালত
পর্যন্ত গঠন করতে বাধ্য হয়েছে বাঙালি অথচ গাফফার চৌধুরী ’৭৩ সালের আহাজারি করেছেন দালাল
ও ঘাতকদের বিচারে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে। আবার একই গাফফার চৌধুরী এক বছর পরে
’৭৪ সালের ১৮ জুন লিখেছেন, “১৯৭২ সালের মাঝমাঝি
সময়ে কোলাবরেটরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের জন্যে বঙ্গবন্ধুকে আহবান জানিয়ে আমি
ঢাকার একটি দৈনিকে প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘...জাতীয়্ ঐকের জন্যে এই মুহূর্তেই প্রয়োজন সাধারণ ক্ষমা’। এই লেখাটি পাঠ করার পর আমার সঙ্গ দেখা হতেই বঙ্গবন্ধু
হেসে বলেছিলেন চৌধুরী তোমার লেখা আমি পড়েছি। সাধারণ ক্ষমা আমি ঘোষণা করবো, তবে এখন
নয়। ...প্যাঁচা যেমন অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসে, এরাও তেমনি অন্ধ মানসিকতার মধ্যে বাস
করতে ভালোবাসে। আজ এদের ছেড়ে দাও দেখবে এরা পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী পুরনো কাজ শুরু করে দিয়েছে।......
চৌধূরী, সেদিন বুঝবে তোমরা যতো সহজে এদের ক্ষমা করতে পেরেছো এরা তা পারেনি এবং কোনদিন
পারবে না। বঙ্গবন্ধর এই কথা কতো নির্মম তা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি......।”
অর্থ্যাৎ
কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিষোধগার করে দাললদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্যে সরকারকে
উত্যক্ত করে আবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরে কিছুদিনের মধ্যেই দালার বিরোধী সেজে ভালো
মানুষ হতে চেয়েছেন আবদুল। আওয়ামী লীগে এবং বঙ্গবন্ধুর মাথায় সব দায় দায়িত্ব চাপিয়ে
আবদুল আবার নিরাপদ দুরত্বে বসে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন ঘাতক ও দালালদের নির্মমতা এভাবে
স্ববিরোধিতা আর বৈপরীত্যের ধুরন্দর চারে ’৭২, ’৭৩ আর ’৭৪ সালের পুরোটা সময় ধরেই আবদুল
বিপাকে ফেলেছেন আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্কবন্ধুর সরকারকে। আবুদলেরর লেখা পড়লে
মনে হয় ’৭২, ’৭৩ সালের সেই ব্যস্ততম সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
কাজ ছিলো কেবল আবদুল রচনাবলী পড়া এবং সেই আলোকে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা। আর এসব
কথা এখন আবদুল বলে বেড়াচ্ছেন এ্ ভেবে যে, এ কথার প্রতিবোদ করার এখন কেউ নেই। আবদুরের
বরাবরের অভ্যেস এ্টাই- প্রয়াত ব্যক্তিদের সঙ্গে তার স্মৃতি ও সম্পর্কের বয়ান করা- যার
ফলে একে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কারণ সংশ্নিষ্ট সেই ব্যক্তিটি এখন পৃথিবীতে নেই।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যের দাবি করেও আবদুল এখন অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন।
তবে
সময় এসেছে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্মে বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে
শক্তির সামনে আবদুল গাফফার চৌধূরীদের মুখোশ উন্মোচন করার। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ৯৩
হাজার পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীর সদস্য হত্যা হরেছিলো ৩০ লাখ বাঙালিকে বাদ্য করেছিলো
বর্বররা দেশে ছেড়ে শরণাথী হয়ে ভারতে যেতে, ধ্বংস করেছিলো- জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছিলো
শ্যামল বাংলার শত শত গ্রাম আর জনপদ। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বাহিনী
যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে ভারত হয়ে পাকিস্তানের চয়ে যায়। আর বাংলাদেশে রেখে যায় মুক্তিযুদ্ধের
সময় তাদের সৃষ্ট এ দেশের স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী তথাকথিত পীস কমিটির ৩০ হাজার সদস্য,
রাজাকার, আলবদর, আলশামম ও অন্যান্য গেষ্টাপো বাহিনীর ১৩ লাখ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের
সময়ে পাক হানাদারদের সহযোগী এ দেশের কুখ্যাত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ
ও নেজামে ইসলামী, পিডিপি, কনভেনশন মুসলিম লীগ ও কাউন্সিল মুসলিম লীগের কয়েক লাখ সদস্যকে।
১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি এমনি এক অবস্থার মধ্যে দেশে ফিরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
শুরু করলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গটনের কাজ। বাংলার ঘরে ঘরে তখন শহীদের জন্যে
আর্তনাদ- পাক হানাদার ও ঘাতক দালালদের হত্যা ও ধ্বংসযঙ্গের নিদারুণ চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের পাশাপাশি
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসরদের বিচারের জন্যে এক অধ্যাদেশ বলে ’৭২-এর ২৪ জানুয়ারি
জারি করলেন দালাল অধ্যাদেশ ‘৭২। ঘাতক-দালাল-রাজাকার-আলবদরদের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার
জন্যে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করলো বঙ্গবন্ধুর সরকার। ঘাতক-দালালদের আত্মপক্ষ সমর্থনেরও
পুরোপুরি সুযোগ দেয়া হয়েছিলো সেদিনের সেই বিচার প্রক্রিয়ায়। কিন্তু তখন আবদুল গাফফার
চৌধুরীর মতো কিছু বর্ণচোরা লোক অযথাই ছড়াতে লাগলেন- দালাল অধ্যাদেশের অপপ্রয়োগ ঘটছে—
দালাল অধ্যাদেশ দিয়ে ব্যবসা চলছে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হোক ইত্যাদি। দালাল অধ্যাদেশের
মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আজ এই ’৯০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে-
স্বাধীনতার এই দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর পরেও আজ বাংলাদেশের বাস্তবতায় একথা জ্বলন্ত সূর্যের
ন্যায় প্রমাণিত হয়েছে, আবদুলরা সেদিন অসৎ উদ্দেশে মিথ্যাচার করেছিলো- দালাল অধ্যাদেশ
জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করেনি। কারণ দালালদের সাধারণ ক্ষমতা করেও বিংবা দালাদের বিচার স্থগিত
করেও রক্ষা করা যায়নি জাতীয় চার নেতা এবং মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ
নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রী এম মসসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে।
স্বাধীনতার ২৪ বছর পরেও আজকের বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক ও দালাল রাজাকর চক্র
একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। তারা আজো পাকিস্তানী চিন্তা ও ভাবধারা এবং পশ্চাৎপদ
সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী কর্মকান্ড দিয়ে কলুষিত করছে রাজনৈতিক অঙ্গন- রগ কেটে দিচ্ছে
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা,কর্মীদের। করছে নারী নির্যাতনও ফয়োয়াবাজি। দখল করতে চাচ্ছে
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদ। আর আবদুল গাফফার চৌধুরীর মত কিছু
স্বার্ধন্বেষী ব্যক্তি চেয়েছিলো এসব ঘাতক-দালালদের রক্ষা করতে- তাদের মাধ্যমে জাতীয়
ঐক্য গড়ে তুলতে। হায় সেলুকাস – কি বিচিত্র এই দেশ।
@লেখক,
সাংবাদিক

