শনিবার, ২১ জুন, ২০১৪

আবদুলের অবগতির জন্য কিছু কথা



“কাছে হোক আর দূরে হোক ধূর্ত শেয়াল ধূর্তই থাকে’’
-কাজী শাহেদ আহমেদ


গতকালের পর
 
আবদুল ওস্তাদ লোক নিজেই লিখেছে ছয় দফার বিরুদ্ধে সে কিছু লেখেনি, আবার লিখছে, ‘‘বঙ্গবন্ধু ছয় দফার প্রতীক হিসেবে ছয়টি কবুতর আকাশে উড়িয়ে দেন, দুটি কবুতর মুখ থুবড়ে পযে যায়।’’ তাই দেখে আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখেছিল। লেখার কায়দা কি। বাহানা কি। কবুতর পড়ে গেছে। তাই আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখেছে। কবুতরের দোষ। আবদুলের দোষ নয়। কবুতর না পড়লে তো আর লিখতো না। তাই ওটা ছয় দফার সমালোচনা নয়। তাছাড়া থাকলে কর্নেল (অবঃ) দেখাক। কর্নেল (অবঃ) তাকেদেখাবে নিশ্চয়ই।তিনি লিখেছেন বঙ্গবন্ধু পরে তোর ছয় দফার বিরুদ্ধে লেখা পড়ে আবদুল লেখাটিতে আসলে কি বলতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারেন। তাহলে আবদুলের ছয় দফার বিরুদ্ধে লেখা একমাত্র অতিকষ্টে বাংলাদেশ হবার পর শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন। আবদুল সব সময় মরা মানুষকে সাক্ষী মানে তার মিথ্যার সত্যতা প্রমাণের জন্যে। বঙ্গবন্ধু নাকি বুঝতে পেরেছিলেন আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে রাজাকার হামিদুল হকের পত্রিকায় লিখলে ওটাকে ছয় দফার বিরুদ্ধে নয় মনে করে নিতে হবে। আবদুলের সামনে আমরা তেমন কোনো প্রয়াত স্বাক্ষীকে হাজির করতে পারছি না বলে দুঃখিত। তবে তার লেখা হাজির করবো।
৩০-১২-৯৪ ইং তারিখে আবদুল নিজের লেখার থেকে নিজে উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের কাগজের উদ্দেশ্যে বলছে, ‘‘আমার বক্তব্যে কোন অস্পষ্টতা আছে কি?’’ ওস্তাদ লোক। নিপুণ লোক।ঝাড়ফুক তাকতুক করাতে ও বোঝাতেও আবদুলের জুড়ি নিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধার সৃষ্টি হলে বহুদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাজনের সঙ্গীত গেয়ে তিনি লিখছেন- খালেদা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন অতএব তাকে উৎখাত করা যাবে না। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার খাতিরে খালেদাকে স্বপদে রাখতে চেয়েছেন আবদুল। নির্বাচন কমিশন শক্ত করতে বলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতা সংকুচিত করতে বলে আবদুল প্রশ্ন রাখেন তার লেখায়, কোনো অস্পষ্টতা আঝে কি?’’ না নেই। অন্তবর্তী সরকার হবে, খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, সংকুচিত ক্ষমতা দিয়ে, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে, নির্বাচন হবে, পরীক্ষা হবে, হাসিনা সব মেনে নিয়ে পরীক্ষা দেবেন। সব পরিষ্কার। সব ছাপ। আর অস্পষ্টতা নেই বলেই তো সম্পাদকীয় লিখতে হয় আজতের কাগজে। আবদুল লিখেছেন, ‘‘একমাত্র উদ্দেশ্যপরায়ণ ও মতলাববাজ লোক ছাড়া তার ঐ লেখার অন্য কোন অর্থ করা কারো পক্ষে সম্ভব কি?’’ ঠিক লিখেছেন। আমিও যেমন উদ্দেশ্যপরায়ণ মতলববাজ লোক আবদুলও তেমিন উদ্দেশ্যপরায়ণ মতলববাজ লোক। আবদুলের উদ্দেশ্য ও মতলব হচ্ছে এই সংকটে অন্তবর্তীকালীন সরকার হোক। খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকুক। সংকুচিত ক্ষমতা নিয়ে। ইলেকশন কমিশন শক্তিশালী হোক। নির্বাচন হোক। পরীক্ষা হোক। এবং সেই নির্বাচনে সেই পরীক্ষায়শেখ হাসিনা পরীক্ষা দিক। আত্মসমর্পণ করুক। আত্মহত্যা করুক। আর আমি চাই খালেদার প্রধানমন্ত্রীত্বের বাইরে এদেশে নির্বাচন হোক। সেই সাথে যা যা করা লাগে সর্বদলীয়ভাবে সম্মত হয়ে তা করা হোক। নির্বাচন হোক। তিন চার বার ঐ ভাবে নির্বাচন হোক। তাতে জনসাধারণ যে দলকে খুশী জয়ী করুক। দুই মতলববাজের বিচার পাঠক করুক। দেশবাসী করুক। ভবিষ্যৎ করুক। এই আন্দোলনের অনেক মাত্রা আছে। অনেক কারণ আছে। অনেক ব্যথা বেদনা আছে। অনেক ইতিহাস আছে। আর সবকিছুর মধ্যে একটাই দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ কর্তত্বে –নির্বাচন হোক অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে হোক। এবার হোক। আগামী তিন চার বার হোক। এটা সার্বজনীন দাবী। এখানে বোদয় আবদুলকে মিনে করিয়ে দেয়া দরকার কেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে রেখে নির্বাচনে আমাদের ও দেশবাসীর এতো আপত্তি। কারণ তিনি ঐ পদে বহাল থেকে নির্বাচনে কারচুপি করতে পারেন। লন্ডন থেকে হয়তো মাগুরার খবর রাখা কঠিন। তবে দেশের মানুষ সেসব কথা ভালোভাবেই জানে। আবদুলের কথা মানলাম। খালেদা প্রধানমন্ত্রী। কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তবুও ফোন করলেন কুমিল্লার ডিসিকে নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু বলার জন্যে। তখন ডিসি কুমিল্লা থেকে ফোনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা কি বলবে, ‘‘ম্যাডাম আপনার তো এখন নির্বাহী ক্ষমতা নেই। আপনি আমাকে ফোনে নের্দশ দিতে পারেন না।’’ এটা কি সম্ভব? আমরা যারা এখনো এদেশে থেকে (অবঃ) নই, তারা এদেশের বাস্তবতার ব্যাপারেও অবোধ নই। ছয় হাজার মাইল দূরে বসে আবদুল খালেদাকে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে নির্বাচন দেবার কথা বলতে পারছেন না, আর ডিসি, এসপি, ওসি প্রধানমন্ত্রীকে বাধা দেবেন। দূরে বসে মতলববাজ আবদুল খালেদাকে রাখার জন্যে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লেখে তাই আজকের কাগজকে কলম ধরতে হয়েছিলো।আবদুল ইতিহাস ঘাটে তার লেখায় শুধু খালেদাকে ক্ষমতায় রাখার জন্যে, তাই আজকের কাগজকে ইতিহাসের পাতা ঘাটতে হয় আবদুলকে খুঁড়ে বের করতে। এখন বুলডোজার দিয়ে খুঁড়ে বের করা হবে আবদুলের অতীত ইতিহাস। অসুবিধা হচ্ছে কি আবদুলের একই লেখায় টক মিষ্টি ঝাল লবণ মরিচ সব দিয়ে মাখানো এক খিচুড়ি থাকে যা সব দলকে খূশি করে সব দলকে নারাজ করে আর উদ্দেশ্যের, মতলবের কাজটুকু হাসিল হয়ে যায়। কেউ তাকে ধরলে তার পক্ষের লেখাটুকু তুলে ধরে খুশি করে ও বিপক্ষের খারাপটুকু দেখিয়ে দেয়। পটু লোক। কাজে আবদুলের কেরামতি আছে। জানে, কোনা লেখায় ভাল মন্দ থাকলে সবাই নিজের ভালোটা বেছে নেয় ও অন্যের মন্দটা বেছে নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। আবদুল তা জানে। আবদুলের ঐ লেখার টার্গেট ছিলো শেখ হাসিনার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা কিন্তু আবদুল ব্যর্থ হয়েছে। আবদুল লিখেছেন ‘‘কর্নেল (অবঃ) সম্পাদক সম্ভবত নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার।’’ ধরে নেওয়া যাক কথাটি ঠিক। এবং ঠিক হলে তাতে দোষের কি? নতুন লোক কি জন্মাবে না? নতুন লোক কি পার্টিতে যোগদান করতে পারবে না? নতুনদেরকে ‘‘এজেন্ট প্রোভোকেটিয়ার্স’’ বলে শেখ হাসিনাকে সাবধানে থাকতে বলেছেন। শেখ হাসিনাকে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনি আমার থেকেও সাবধানে থাকবেন, আপনি আবদুলের থেকেও সাবধানে থাকবেন। কারণ এই আবদুল মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ স্বাধীন হবার পরে আপনার আব্বাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, হামিদুল হক চৌধুরীর পত্রিকায় কাজ করে ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখলে সেটাকে ছয় দফার বিপক্ষে বলে মনে করা যাবে না। এবং আপনার আব্বা আমাদের বঙ্গবন্ধু এই ধরণের আবদুলদের সম্পর্কে সাবধান না হওয়ার কারণে তার ঐ করুণ পরিণতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি ঘটেছিলো। বঙ্গবন্ধুর ঐ ট্রাজিক পরিণতির ক্ষেত্র প্রস্তুতি করণে আবদুলের লেখার অল্প হলেও অবদান ছিলো। আবদুল ’৭২ থেকে শেষ অব্দি নিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লিখে গেছে। সরাসরি লিখেছে। মিত্র সেজে লিখেছে। এবারে আবদুল আমার সম্পর্কে তার লেখায় যে সব ব্যক্তিগত কুৎসা ও অভিযোগ এনেছে সে সম্পর্কে আমার কথা।
লাহোরে পড়াকালে ১৯৬১ তে লাহোরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তার নেতৃত্বে আমিও ছিলাম ফলে তখনকার গভর্নরের আদেশে আরো ছয় জন বাঙালিসহ আমি বন্দী জীবন কাটাই। কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হই। লাহোর হাইকোর্ট-এ রীট করে মামলায় জিতে কলেজে পুনঃপ্রবেশ করি।
তবে একটা শিক্ষা হয়েছিলো যে, রাজনীতি করতে হলে সারপ্লাস ‘নলেজ’ এবং সারপ্লাস ‘মানি’ দরকার। তা নাহলে পরনির্ভর থাকতে হয়। আবদুলদের মতো ধড়িবাজের জীবন যাপন করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ওয়াপদায় তারপর দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে চাকরী করতে করতে আর্মিতে চলে যাই। বাঙালি যাতে আর্মিতে যায় সবাই তখন এনকারেজ করেছেন। তাই আর্মিতে যাই। পাকিস্তানীদের সাথে লড়তে হলে আর্মিতে বাঙালি দরকার সবাই তখন উপলব্ধি করেছেন। আর্মিতে বাঙালি না থাকলে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি ফোর্স পেতাম কোথায় আমরা? সেই আর্মিতে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং করেছি না হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়িয়েছি। আমিই প্রথম বাঙালি ইন্সট্রাক্টার কই বিসালপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আমারই ছাত্ররা এখন বাংলাদেশে আছেন। আদরে মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যন্ত আছেন। সেকি কম গর্বের কথা। কম আনন্দের কথা। আবার বাংলাদেশ আর্মিতে বাংলাদেশ মিলেটারী একাডেমি থেকে পাস করা আমার ছাত্র ব্রিগেড কমান্ড করছে সেকি আনন্দের ও গর্বের কথা নয়? সেখানে আমাকে উর্দিপরাআলা, উর্দির তেজারতি বলা, কর্নেল (অব:) সম্পাদক বলা, লেফট রাইট করা বলা মানে কি? আবদুল কাকে অপমান করতে চায় আর্মিকে, আর্মির পদবীকে, ব্যাংককে নাকি কাজী শাহেদ আহমেদকে? আবদুল চাইলো আর ভোরের কাগজ ছাপলো। প্রকাশক সাবের চৌধুরী আছেন সম্পাদক মতিউর রহমান আছেন ভোরের কাগজে। তারা কি সম্পাদনা করবে না?
আবদুলের অজানা থাকার কথা নয় যে আমিই প্রথম সামরিক বা বেসামরিক অফিসার যে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপ্রধান হবার পরে আর্মি ছেড়ে বেরিয়ে আসি তবুও ইচ্ছা করে তিনি লিখেছেন, “তিনি (শাহেদ) জিয়াউর রহমানের আমলে এবং এরশাদের আমলেও একটা সময় পর্যন্ত আর্মিতে ছিলেন” কথাটা ডাহা মিথ্যা। ব্যাপার আছে, আবদুল ও আবুদলেরা আর্মিকে প্রকাশ্যে একটু সমালাচনা করতে ভালবাসে। গোপনে আর্মিকে সামান্য চাটতে ভালবাসে। তার মধ্যে আর্মিকে “নেপো নেপো” বলে ডেকে ক্ষমতায় আনতে ভালবাসে। আবার অবস্থা বুঝে একটু আধটু সমালোচনা করে বসে। আমি সেই অফিসার যে ২৭ মার্চ ’৭১ সকালে বিসালপুরে বিদ্রোহ করে বসি। আমি লিখে আমার বেতন ছাড়া সব কিছু বন্ধ কের দেই। (প্রমান করার কাগজ আমার হাতে আছে) সাথে সাথে অঘোসিত ভাবে গৃহবন্দী হয়ে পড়ি। এক মনসুর আফজাল ছাড়া কোনো বাঙালি অফিসারকে আমার বাসায় আসতে দেয়া হয়নি। মানা ছিলো। আসেনি। পাঞ্জাবীদের প্রশ্নই আসে না। ক’দিনের মধ্যে কামাল লষ্কর একরামের সাথে খারিয়া দিয়ে পালাবার প্ল্যান করে ফেলি। ব্যর্থ হয়। মাইন লাগায়। কামাল, লষ্কর বলে যার যার ব্যবস্থা করো। বেরিয়ে পিন্ডি হয়ে তখন মেজর মোজাম্মেলের বাড়ি একরাত থেকে পিন্ডি মেষে গাড়ি ফেলে মারী দিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ি। ফেরত নিয়ে যায় বিসালপুরে। আবার গৃহবন্দী হই। কানে আসে যাশোরে খালিশপুরে ফ্যামিলি আমার মাসাকার হয়েছে। আর্মি ঘিরে রাখছে। খবর আসে আগরতলা থেকে ঢাকায় আমার স্ত্রী ছোট ভাই মুক্তিবাহিনীর অপারেশনে এসে এক রাত বাড়িতে থাকতে গিয়ে আমির হাতে ধরা পড়েছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করি। হঠাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ’৭১ আমাকে ১ ঘন্টায় সময় দিয়ে পার্ক দিয়ে লাহোরের ট্রেনে তুলে দেয়া হয় বিসালপুর থেকে। অসুস্থ বউ বাচ্চা পড়ে থাকে। লাহোরে রেল ইস্টিশনে থেকে আমাকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে কাসুর নিয়ে যাওয়া হয়। সব মুখ থমথমে। কেউ কথা বলে না। আবার বন্দী অবস্থা। কর্নেল রশিদ মালেক কমান্ডিং অফিসার সে আমাকে চোখে চোখে রাখে। আস্তে আস্তে পরিস্কার হতে থাকে যে, আমাকে মেরে ফেলা হবে। একদিন সকালে আমাকে বর্ডারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এর মধ্যে জিওসি মেজর জেনারেল মালেক আমার বর্ডারের উপর এসে কথা বলার ছলে ফিসফিস করে বলে যে, ঐ রাতেই যেন বিসালপুর গিয়ে বউ বাচ্চা আনি। টিকেট করে তাদেরকে ঢাকায় পাঠাই এবং নিজে বর্ডার ক্রস করে যেন পালিয়ে যাই। এবার সে আমাকে সেই রাতে বাচাঁলো। সেই সন্ধ্যায় বউ বাচ্চা আনতে বিসালপুরে গিয়ে দেখি না খেয়ে দেয়ে টাকা পয়সা চিঠিপত্র খাবার দাবারবিহীন বন্দী জীবন কাটাচ্ছে আমার স্ত্রী ও অসুস্থ ছেলে। আমাকে দেখে একসাথে দুজনে কেঁদে উঠে। একদিন বাড়ির বাইরে যেতে দেয়নি। শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন মনসুর আফজাল সব অগ্রাহ্য করে মাঝে মাঝে বিকেলে এসে নাবিলকে কোলে নিয়ে ঘুরিয়ে বেড়িয়ে ঠান্ডা করে বাড়ি দিয়ে গেছে। সবকিছু তৈরি দেখে বুঝতে পারি জেনারেল মালেকের অর্ডার। সেই রাতে লাহোর চলে আসি। লাহোরে বোনের বাড়ি এডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ করেঝে এসে আশ্রয় নি। ঢাকায় জানাই ওরা আসছে, ওদেরকে যেন Mitford- এ রাখা হয় অর্থ্যাৎ লুকিয়ে রাখা হয়। ওদের পাঠাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তারপর আবার বর্ডারে যাই। রাত ১ টায় পর কমান্ডিং অফিসারের জীপ ও ড্রাইভার আসে। বাংকারে ড্রাইভার একটা চিঠি হাতে দেয়। পড়ে দেখি লেখা আছে “Pick up nothing, get into Jeep, get lost in Lahore, don’t ask question.”

পরে শুনেছি ঐ রাতে ক্যাপ্টেন সাইফকেও সি ও তুলে নেন। পরে জানি ঐ রাতে আমাদের মেরে ফেলার কথা ছিলো। যুদ্ধের ও পরে প্রায় দুই বছর পাকিস্তানী কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেই বন্দী অবস্থায় কাটে। দেশে ফেরার পর এক সময়ের ভাল বন্ধু জেনারেল মঞ্জুর রাতের পর রাত বুঝিয়ে মাস্টারী করার কথা বলে, বিএমএর কথা বলে, দয়ারামপুরের সেনানিবাসের সার্ভে করার কথা বুঝিয়ে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কথা বলে আমাকে ঢাকায় পাঠায়। মাসাধিককাল পরে ডিউটিতে যোগ দিয়ে দয়ারামপুর সেনানিবাসের সার্ভে কাজ ৭ দিনে সমাপ্ত করে কুমিল্লায় যাই বিএমএ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। বিএমএ (বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি, এখন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারায়) ছিলো বঙ্গবন্ধুর চোখের মনি। ভীষণ গর্বে গর্বিত হয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম পাসিং আউট প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণে করেন। সেই প্রথম বাঙালি অফিসার বাংলাদেশের একাডেমি থেকে পাস করে বাংলাদেশের আর্মির অফিসার হলো। ১৫ আগস্ট ’৭৫- এ বঙ্গবন্ধু মৃত্যুবরণ করেন। তার পরের দিনই বলেছি চাকরি করবো না। বিএমএতে কেউ আমাকে রাখতে পারেনি। ঢাকায় চলে আসি। রিজাইন করি। জোর করে আমাকে আর্মিতে রাখা হয়। এবং বলা হয় নেভাল হেডকোয়ার্টারে বনানীতে তৈরী দিলেই ছেড়ে দেয়া হবে। এদিকে জিয়া সাহেব পায় পায় এগিয়ে যান। সায়েম সাহেবের মাধ্যমে নির্বাচন না দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন। প্রথমে ভাঙ্গা শুরু করেন সাংবিধান। সাল ‘৭৭। এতটুকু দেরি না করে আবার রেজিগনেশন দেই। জিয়া সাহেবের অর্ডার কেউ চাকরি না করতে চাইলে ধরো, অ্যারেস্ট করো, ভয়ভীতি দেখাও, না হলে ডিসমিস করে দাও। আর্মিতে জিয়ার ত্রাসে সবাই কম্পমান। খবরদার আর্মি থেকে চাকরি ছাড়ার কোনো কেস পাঠাবে না। আমাকে পাঠালো রংপুর। গিয়ে জিওসি মেজর জেনারেল আমজাদ আহমেদর চৌধুরীর সামনে হাজির হয়ে বললাম, “kill me, cook me, Call me. I will not serve in this Army.”  আমি ছিলাম  3 Engr, Bn 11 Div.- এর কমান্ডিং অফিসার। জেনারেল যা করার তাই করলেন। লাল টেলিফোন তুলে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে জানালেন যে, তার ব্যাটালিয়ান কমান্ডার বিদ্রোহ করেছে। যা শুনার আমার সামনেই শুনে তিনি বললেন, ``consider you are under open arrest.’’ কোথাও যেন না যাই কারণ জিয়া এরশাদকে পাঠাচ্ছেন। পরের দিন সকালে হেলিকপ্টার করে এরশাদ রংপুর এসে হাজির। বিকেলে টেনিস খেলা হলো। আমি আর ইমতিয়াজ একদিকে, অন্যদিকে এরশাদ ও আমজাদ। রাতে নৈশভোজ। সামনে বসা আমজাদ এরশাদ, আমি পেছনে। হঠাৎ এরশাদ জোরে জোরে জেনারেল আমজাদকে জিঙ্গাসা করলো, ``How is he as an officer?” জেনারেল আমজাদ উত্তর দিলেন “The best”। আরো বললেন, আর্মি ছেড়ে গেলে দেশের লাভ হবে। দেশের কাজ হবে। এরশাদ আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলো “You don’t want to serve in the Army?” বললাম ‘না’। এরশাদ হাত বাড়িয়ে বললো, “Farewell to Arms.” আমি প্রথম অফিসার যে Civil Military Service থেকে ইস্তফা দিয়ে retirement নিয়ে বের হতে পেরেছি জিয়ার প্রেসিডেন্ট হবার সাথে সাথে। ঐ ঘটনা ‘ইনকিলাব’ অন্য রকম লিখেছিলো। আমি মামলা করেছিলাম। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারধীন। আব্দুল সম্ববত ইনকিলাব পড়ে আমার সৈনিক জীবন সম্পর্কে অসত্য তথ্য পরিবেশন করেছেন তার লেখায়।
আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আবদুল পাশে এসে দাঁড়াতে দেরি করেননি বলে নিজেই লিখেছেন। “আবার আওয়ামী লীগের সুদিনে তার ভুলভ্রান্তির কঠোর সমালোচনা করেছি” এটাও লিখেছেন আবদুল। কি সাংঘাতিক লোক। আওয়ামী লীগের সুদিন আসলেই সে আওয়ামী লীগের ‘ভুলভ্রান্তি’ দেখে। এমনকি এমন লেখা লেখে যার প্রেক্ষিতে অনুপ্রাণিত হয়ে জাসদ লিফলেট আকারে হাজার হাজার কপি আর্মিতে বিলি করে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সুদিনে আব্দুল তার নিজ পত্রিকা জনপদে দিনের পর দিন ও তার সরকার এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে সব উদ্দেশ্যমুলক রচনা প্রকাশ করেছিলো সেগুলিই সামরিক ছাউনিতে ’৭৫-এর ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করেছিলো। আবদুল লিখেছেন, “অপরীক্ষিত নতুন মিত্রের চেয়ে পরীক্থিত পুরানো শত্রু ভালো।” মানে কি? পরীক্ষিত পুরানো শত্রু যেমন গোলাম আযম, মতিউর, আব্বাস, রশিদ, মোশতাক, ডালিম, ফারুক সব ভালো অপরীক্ষিত নতুন মিত্র কাজী শাহেদ থেকে? না তা হয় না। প্রবাদ শুনতে ভালো লাগলেও সব সময় সত্যি হয় না। নতুন মিত্রকে বার বার পরীক্ষা করা হবে। যাচাই করা হবে। দেখা হবে। তাতে উত্তীর্ণ হলে তখন অপরীক্ষিত নতুন মিত্র পরীক্ষিত মিত্রে পরিণত হবে। আর যারা পরীক্ষিত পুরানো শত্রু তাদের বিচার হবে, হাজত হবে, জেল হবে, ফাঁসী হবে ন্যায় নীতি এটাই দাবি করে। ধুকে ধুকে মরবে। আবদুল নিজেই বলুক সে পরীক্ষিত বন্ধু নাকি পরীক্ষিত শত্রু?
আবদুল লিখেছেন, “অপরীক্ষিত নতুন মিত্রের চেয়ে পরীক্ষিত পুরানো শত্রু ভালো।” মানে কি? পরীক্ষিত পুরানো শত্রু যেমন গোলাম আযম, মতিউর, আব্বাস, রশিদ, মোশতাক, ডালিম, ফারুক সব ভালো অপরীক্ষিত নতুন মিত্র কাজী শাহেদ থেকে? না তা হয় না। প্রবাদ শুনতে ভালো লাগলেও সব সময় সত্যি হয় না। নতুন মিত্রকে বার বার পরীক্ষা করা হবে। যাচাই করা হবে। দেখা হবে। তাতে উত্তীর্ণ হলে তখন অপরীক্ষিত নতুন মিত্র পরীক্ষিত মিত্রে পরিণত হবে। আর যারা পরীক্ষিত পুরানো শত্রু তাদের বিচার হবে, হাজত হবে, জেল হবে, ফাঁসী হবে ন্যায় নীতি এটাই দাবি করে। ধুকে ধুকে মরবে। আবদুল নিজেই বলুক সে পরীক্ষিত বন্ধু নাকি পরীক্ষিত শত্রু?
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
আবদুল লিখেছেন, “পরে কাজী শাহেদ আহমেদ হয়েছেন ‘প্রগতিশীল সম্পাদক’ এবং এখন সম্ভবত নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার। তিনি আওয়ামী লীগকে শান্তি ও সমঝোতার পথে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে সাহায্য না করে কাদের স্বার্থে বা কোন মহলের ইঙ্গিত বিরোধী দলগুলোকে তাদের আন্দোলনের অতি হিতৈষী সেজে সংঘাত ও রক্তপাতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে খবরটা আবদুলের ভোরের কাগজের লেখা থেকে জেনে কৌতুক অনুভব করলাম। অর্থ্যাৎ আবদুল বলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচন করলে রক্তপাত ও সংঘাত হবে না আর আমার কথা মতো প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া             আগামী নির্বাচন ও পরবর্তী তিনটি বা চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করলে রক্তপাত হবে। সংঘাত হবে। কি যুক্তি। কি তর্ক। কি চিন্তা। কি সৎ চিন্তা। কি হিতৈষী। আবারো বলছি আবদুল ‘মতলববাজ’, আমিও ‘মতলববাজ’। তিনি চান খালেদার অধীনে নির্বাচন হোক সর্বদলীয় সরকারের মাধ্যমে। আর আমি চাই খালেদা বাদে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক এবার ও পরের তিন চারটি নির্বাচন। অতএব আমার সনির্বদ্ধ অনুরোধ শেখ হাসিনার কাছে, সকল মতলববাজ থেকে সাবধান থাকার। আবদুল লিখেছেন “আমার বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে শদ্ধা করতেন।” বয়স আমার তার থেকে একটু কম নয়। অনেক কম। এক প্রজন্ম কম। আপনি এক প্রজন্মের আমি আর এক প্রজন্মের। তা আমার প্রতি তার শ্রদ্ধা এক লেখার এক সমালোচনায় উবে গেলো? রহস্যটা কি?

সমালোচনা উবে গেলো? রহস্যটা কি?
আবদুল লিখেছেন, “যারা এমপি হওয়ার নমিনেশন লাভ এবং ভবিষ্যতে মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বর্তমানে উর্দি ছেড়ে আলোয়ান গায়ে সাংবাদিক অথবা নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার সেজেছেন, তাদের কাছে আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।” আবদুল যা লিখেছেন সেই কথাগুলোর তাৎপর্য কি তিনি উপলব্ধি করেন তিনি কি চান যে, যারা উর্দি পরেন তারা উর্দি ছেড়ে বিবস্ত্র জীবন যাপন করবেন। পাজামা কুর্তায় শার্টে প্যান্টে- পরে উর্দিতে আর্মিতে। আর্মিতে উর্দি পরতে হয়। লুঙ্গি পাজামায় হয় না। আবার আর্মি ছাড়লে উর্দি পরা যায় না। উর্দি ছেড়ে যা ইচ্ছা পরা যায়। তবে শীত লাগলে আলোয়ান গায়ে দেয়া যায়। এর কোনটায় কোনো অসুবিধা দেখছি না। তাতে আবদুলের আপত্তি কোথায়। সে কি সমস্ত অবসর প্রাপ্তদেরকে বিবস্ত্র দেখতে চায়? এমন তো না যে, কাজী শাহের আহমেদ উর্দি পরলে উর্দি খারাপ আর নুরউদ্দিন পরলে তা ভালো। সাংবাদিক লেখক কবি ঔপন্যাসিক গল্পী হওয়ার জন্যে আবদুলের অনুমতি লাগবে নাকি। আমি তো জানি, যে কেউ যে কোন বয়সে গুণ থাকে তো একজন কবি বা সাংবাদিক বা ঔপন্যাসিক হতে পারে। আমি যখন সাংবাদিক হই এরশাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে, আবদুল তখন এরশাদের পক্ষে কলম চালাচ্ছে। আবদুল তার লেখায় এমপি, মন্ত্রী হওয়া সম্পর্কে আমাকে খোচা মেরেছে তাই এবার নমিনেশন, এমপি হওয়া ও মন্ত্রী হওয়া সম্বন্ধে লিখছি। এর কোনটাতে আমার আপত্তি নেই। সেংকোচ নেই। ক্ষমতায় যেতে লজ্জা কিসের? ভীষণ খুশি হবো নামিনেশন পেলে, আরো খুশি হয়ে জনগন এমপি বানালে এমপি হবো এবং মন্ত্রী বানালে মন্ত্রী হবো। তবে তার চেয়েও বেশি খুশি হবো। যদি আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং সেই নির্বাচনের জোয়ারে ৭০ সালের মত জয় বাংলার নৌকা তরতর করে এগিয়ে যায় এবং আমরা আমাদের জাতিসত্তা আবার ফিরে পাই।
-   আগামীকাল তৃতীয় কিস্তি। কাজী শাহেদ আহমেদ: সম্পাদক, আজকের কাগজ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন