শনিবার, ২১ জুন, ২০১৪

স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের পক্ষে এবং কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিপক্ষে আবদুলের তৎপরতা




স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের পক্ষে এবং কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিপক্ষে আবদুলের তৎপরতা
 -মোস্তাক হোসেন

আবদুল গাফফার চৌধূরী এক এক সময় জাতির ক্রান্তিকালে সময় বুঝে কখনো কলমের মুখ দিয়ে কখনো কলমের উল্টো দিক দিয়ে লেখেন। যেমন ১৯৭৩ সালে সারা বাঙালি জাতি যখন জাতির জনক ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে নিয়োজিত- আবদুল গাফফার চৌধুরী তখন ব্যস্ত তার কলমকে খগড় বানিয়ে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ঘায়েল করতে। আবদুল গাফফার চৌধূরী তখন কলম ধরলেন একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের পক্ষে এবং কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে। এখানে ১৯৭৩ সালের মে মাসে লেখা গাফফার চৌধুরীর এ সম্পর্কিত রাজনৈতিক কলামের কিছু অংশ ও আজকের কাগজের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলে।
২২ মে ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ পত্রিকার কলামে আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছিলেন, “আমার দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্থাশীল হয়েও আজ আমাকে এই সরকারের কোনো কোনো নীতি ও কাজের সমালোচনা করতে হচ্ছে। কোলাবরেটর আইনের অপপ্রয়োগ বাংলার ঘরের ঘরে হাহাকার তুলেছে। ভাইয়ে ভাইয়ে, বাপে ছেলেতে সন্দেহ ও শত্রুতা সৃষ্টি করেছে এবং স্বাধীনতার পর যখন অনড় জতীয় ঐক্যের প্রয়োজন, তাকে ভেঙ্গে শতধা বিভক্ত করেছে। কোলাবরেটর আইনকে হাতিয়ার করে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেনীর লোক রাতারাতি ভাগ্য গড়েছে। .... কোলাবরেটর আইনের অপপ্রয়োগ দেশের জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করেছে।’ ১৯৭৩ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য যখন প্রয়োজন ছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে শক্তিশালী করা, সমর্থন দেয়া তখন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দাবিদার আবদুল গাফফার চৌধুরী তার কলমকে খড়গের মতো ধরেছিলেন সদ্যপ্রস্ফুটিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশেল মানুষ যখন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে ও আইনসম্মতভাবে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার প্রক্রিয়ার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন আবদুল সেই পুরনো কায়দায় আবার শুরু করলেন, ‘কোলাবরেটর আইনের অপপ্রয়োগ বাংলার ঘরে ঘরে হাহাকার তুলছে।’ সব সময়ই আবদুল এভাবে লিখে আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলেছেন এবং বিপদে ফেলে আবার তার পাশে এসে সহানুভুতি জানিয়ে ফায়দা লুটেছেন। ঠিক যেভাবে ’৭০ ও ’৭১ – এ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়কে ভন্ডুল করার জন্যে আবদুল কলম চালিয়েছিলেন হামিদুল হক চৌধুরীর পত্রিকায় আহাজারি করেছিলেন ‘মোনায়েম খানের পতনে লাভ কি হলো’ বলে? ঠিক তেমনি আবার স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে কাজ করতে না পারে তার জন্যে নিজের কল্পনা শক্তি দিয়ে ‘কোলাবরেটর এ্যাক্টের মাধ্যমে বাংলা ঘরে ঘরে হাহাকার সৃষ্টি করলেন।’ মূলত: আবদুল এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজে সেদিন কলম ধরেছিলেন। কোলাবরেটর এ্যাক্টকে কার্যকর করতে না দিয়ে আবদুল রক্ষা করতে চেয়েছিলেন তার পুরনো প্রভু রাজাকার হামিদুল হক চৌধুরীসহ অন্যান্য কুখ্যাত রাজাকারদের আর অন্যদিকে একাত্তরের ঘাত দালালদের বিচার না করতে পারার দায় দায়িত্ব যাতে পুরোপুরি আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর সরকারের ঘাড়ে চাপে- তাও নিশ্চিত করা ছিলো আবদুলের এসব লেখার মূল উদ্দেশ্য। সেদিন এসব আবদুলদের কারনেই মূলত: বিচার করা সম্ভব হয়নি একাত্তরের কুখ্যাত ঘাতক ও দালালদের। আজো সেই ঘাতক ও দালালদের অপতৎপরতায় বাংলাদেশ ক্ষতবিক্ষত- আজো গোলাম আযমের মতো কুখ্যাত ঘাতক বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। আবদুলদের মতো কিছু রর্ণচোরা ও তথাকথিত প্রগতিশীলতার দাবিদারদের আহাজারিতেই সেদিন আওয়ামী লীগ সরকার এক পর্যয়ে বাদ্য হয়েছিলো ঘাতক ও দালালদের জন্যে সাদঅরণ ক্ষমা ঘোষণা করতে। আর আজ সেই সাধারণ ক্ষমার দায়দায়িত্ব এককভাবে আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা বাহবা নিতে চাচ্ছে- দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিত্র সেজে আবদুলের মতো ব্যক্তিদের লেখনিতেউ ঘটেছে আওয়ামী লীগের জন্যে এই বৈরী পরিবেশ- বিরুপ পরিবেশ। সেদিন বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবও আফসোস করে বলেছিলেন একটি মিছিলও বের হয়নি একাত্তরে ঘাতক ও দালালদর বিচার চেয়ে- ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মতো একটি বিচার পক্রিয়া দাবি করে- যার জন্যে কোলাবরেটর এ্যাক্ট ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। আবদুল শুধু কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই সেদিন ক্ষান্ত হয়নি- আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যদেরকে চরিত্র হননেরও উদ্যোগ নিয়েছেন সেদিন কোলাবরেটর এ্যাক্টকে জড়িয়ে। তাই তিনি সুস্পষ্টভাবেই সেই লেখায় লিখেছেন, ‘কোলাবরেটর আইনকে হাতিয়ার করে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেনীর লোক রাতারাতি ভাগ্য গড়েছে।’............এর চেয়ে জঘন্য অপবাদ আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আর কে দিয়েছেন সেদিন আবদুল গাফফার চৌধুরী ছাড়া? এটা করে আবদুল একদিকে একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের রক্ষা করেছে বিচার থেকে আর জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকারকে, বঙ্গবন্ধকে এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদেরকের। বিপর্যস্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপকে – প্রতিটি কর্মকান্ডকে। তিলকে তাল বানানোর প্রক্রিয়ায় আবদুল সব সময়ই ওস্তাদ লোক এবং সেই তাল বানানোর প্রক্রিয়া সব সময়ই আবদুল করেছেন তার নিজের হীন ব্যক্তি স্বার্থে, নিজের লাভের জন্যে। ’৭৩-এর স্বাধীন বাংলাদেশের ঘরের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, গ্রাম-জনপদ ধ্বংস করার স্মৃতিচিহ্ন এখনো বিদ্যমান কিন্তু আবদুল এসবের মাঝে তখন হাহাকার খুঁজে না পেলেও হাহাকার খুঁজে পেয়েছেন কোলাবরেটর এ্যাক্টের অপপ্রয়োগের মাধ্যে। এমনকি আগ বাড়িয়ে লিছেলেন, ‘ভাইয়ে ভাইয়ে বাপে ছেলেতে সন্দেহ ও শত্রুতা সৃষ্টি করেছে।’ এরকম পরিস্তিতি তখন কোলাবরেটর এ্যাক্টকে ঘিরে আদৌ সৃষ্টি হয়নি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। কিন্তু আবদুল লিখেছেন। উদ্দেশ্য একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের রক্ষা করা- বঙ্গবন্ধুকে আপসেট করা, বিপর্যস্ত করা, অস্পষ্টতায় রাখা। আবদুল লিখেছেন ‘কোলাবরেটর আইনের অপপ্রযোগ জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করেছে।....’ যা আামাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি এক চরম আঘাত ছাড়া আর কিছু নয়। ত্রিশ লাশ শহীদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আবদুল কিভাবে বলতে পারলেন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকাররা- স্বাধীনতা বিরোধীরা পাশাপাশি অবস্থান করে জাতীয় ঐক্য গড়তে পারে? আবদুলের দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদররা আজো, মুক্তিযুদ্ধের মদ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে বিশ্বাস করতে পারেনি- বাংলাদেশের প্রগতি ও অগ্রগতিতে, অগ্রযাত্রায় সমর্থন দিতে পারেনি। তারা আজো বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্নে বিভোর – জাতির পতাকাকে তারা খামচে ধরছে- আঘাত হানছে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববাসীদের ওপর, প্রগতিশীল ও অসামম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার আদর্শের রাজনৈতিক নেতার্কিদের ওপর। আজকের বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচারের দাবিতে গণআদালত পর্যন্ত গঠন করতে বাধ্য হয়েছে বাঙালি অথচ গাফফার চৌধুরী ’৭৩ সালের আহাজারি করেছেন দালাল ও ঘাতকদের বিচারে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে। আবার একই গাফফার চৌধুরী এক বছর পরে ’৭৪ সালের ১৮ জুন লিখেছেন, “১৯৭২ সালের মাঝমাঝি সময়ে কোলাবরেটরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের জন্যে বঙ্গবন্ধুকে আহবান জানিয়ে আমি ঢাকার একটি দৈনিকে প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘...জাতীয়্ ঐকের জন্যে  এই মুহূর্তেই প্রয়োজন সাধারণ ক্ষমা’।  এই লেখাটি পাঠ করার পর আমার সঙ্গ দেখা হতেই বঙ্গবন্ধু হেসে বলেছিলেন চৌধুরী তোমার লেখা আমি পড়েছি। সাধারণ ক্ষমা আমি ঘোষণা করবো, তবে এখন নয়। ...প্যাঁচা যেমন অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসে, এরাও তেমনি অন্ধ মানসিকতার মধ্যে বাস করতে ভালোবাসে।  আজ এদের ছেড়ে দাও দেখবে এরা পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী পুরনো কাজ শুরু করে দিয়েছে।...... চৌধূরী, সেদিন বুঝবে তোমরা যতো সহজে এদের ক্ষমা করতে পেরেছো এরা তা পারেনি এবং কোনদিন পারবে না। বঙ্গবন্ধর এই কথা কতো নির্মম তা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি......।”
অর্থ্যাৎ কোলাবরেটর এ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিষোধগার করে দাললদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্যে সরকারকে উত্যক্ত করে আবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরে কিছুদিনের মধ্যেই দালার বিরোধী সেজে ভালো মানুষ হতে চেয়েছেন আবদুল। আওয়ামী লীগে এবং বঙ্গবন্ধুর মাথায় সব দায় দায়িত্ব চাপিয়ে আবদুল আবার নিরাপদ দুরত্বে বসে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন ঘাতক ও দালালদের নির্মমতা এভাবে স্ববিরোধিতা আর বৈপরীত্যের ধুরন্দর চারে ’৭২, ’৭৩ আর ’৭৪ সালের পুরোটা সময় ধরেই আবদুল বিপাকে ফেলেছেন আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্কবন্ধুর সরকারকে। আবুদলেরর লেখা পড়লে মনে হয় ’৭২, ’৭৩ সালের সেই ব্যস্ততম সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাজ ছিলো কেবল আবদুল রচনাবলী পড়া এবং সেই আলোকে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা। আর এসব কথা এখন আবদুল বলে বেড়াচ্ছেন এ্ ভেবে যে, এ কথার প্রতিবোদ করার এখন কেউ নেই। আবদুরের বরাবরের অভ্যেস এ্টাই- প্রয়াত ব্যক্তিদের সঙ্গে তার স্মৃতি ও সম্পর্কের বয়ান করা- যার ফলে একে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কারণ সংশ্নিষ্ট সেই ব্যক্তিটি এখন পৃথিবীতে নেই। এভাবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যের দাবি করেও আবদুল এখন অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন।
তবে সময় এসেছে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্মে বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তির সামনে আবদুল গাফফার চৌধূরীদের মুখোশ উন্মোচন করার। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীর সদস্য হত্যা হরেছিলো ৩০ লাখ বাঙালিকে বাদ্য করেছিলো বর্বররা দেশে ছেড়ে শরণাথী হয়ে ভারতে যেতে, ধ্বংস করেছিলো- জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছিলো শ্যামল বাংলার শত শত গ্রাম আর জনপদ। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বাহিনী যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে ভারত হয়ে পাকিস্তানের চয়ে যায়। আর বাংলাদেশে রেখে যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সৃষ্ট এ দেশের স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী তথাকথিত পীস কমিটির ৩০ হাজার সদস্য, রাজাকার, আলবদর, আলশামম ও অন্যান্য গেষ্টাপো বাহিনীর ১৩ লাখ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদারদের সহযোগী এ দেশের কুখ্যাত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামী, পিডিপি, কনভেনশন মুসলিম লীগ ও কাউন্সিল মুসলিম লীগের কয়েক লাখ সদস্যকে। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি এমনি এক অবস্থার মধ্যে দেশে ফিরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুরু করলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গটনের কাজ। বাংলার ঘরে ঘরে তখন শহীদের জন্যে আর্তনাদ- পাক হানাদার ও ঘাতক দালালদের হত্যা ও ধ্বংসযঙ্গের নিদারুণ চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের পাশাপাশি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসরদের বিচারের জন্যে এক অধ্যাদেশ বলে ’৭২-এর ২৪ জানুয়ারি জারি করলেন দালাল অধ্যাদেশ ‘৭২। ঘাতক-দালাল-রাজাকার-আলবদরদের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার জন্যে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করলো বঙ্গবন্ধুর সরকার। ঘাতক-দালালদের আত্মপক্ষ সমর্থনেরও পুরোপুরি সুযোগ দেয়া হয়েছিলো সেদিনের সেই বিচার প্রক্রিয়ায়। কিন্তু তখন আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো কিছু বর্ণচোরা লোক অযথাই ছড়াতে লাগলেন- দালাল অধ্যাদেশের অপপ্রয়োগ ঘটছে— দালাল অধ্যাদেশ দিয়ে ব্যবসা চলছে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হোক ইত্যাদি। দালাল অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আজ এই ’৯০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে- স্বাধীনতার এই দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর পরেও আজ বাংলাদেশের বাস্তবতায় একথা জ্বলন্ত সূর্যের ন্যায় প্রমাণিত হয়েছে, আবদুলরা সেদিন অসৎ উদ্দেশে মিথ্যাচার করেছিলো- দালাল অধ্যাদেশ জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করেনি। কারণ দালালদের সাধারণ ক্ষমতা করেও বিংবা দালাদের বিচার স্থগিত করেও রক্ষা করা যায়নি জাতীয় চার নেতা এবং মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রী এম মসসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে। স্বাধীনতার ২৪ বছর পরেও আজকের বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক ও দালাল রাজাকর চক্র একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। তারা আজো পাকিস্তানী চিন্তা ও ভাবধারা এবং পশ্চাৎপদ সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী কর্মকান্ড দিয়ে কলুষিত করছে রাজনৈতিক অঙ্গন- রগ কেটে দিচ্ছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা,কর্মীদের। করছে নারী নির্যাতনও ফয়োয়াবাজি। দখল করতে চাচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদ। আর আবদুল গাফফার চৌধুরীর মত কিছু স্বার্ধন্বেষী ব্যক্তি চেয়েছিলো এসব ঘাতক-দালালদের রক্ষা করতে- তাদের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে। হায় সেলুকাস – কি বিচিত্র এই দেশ।
@লেখক, সাংবাদিক

এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার নয় বলেই গাফ্ফারকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে- কাদের সিদ্দিকী


আবদুলের অবগতির জন্য কিছু কথা



“কাছে হোক আর দূরে হোক ধূর্ত শেয়াল ধূর্তই থাকে’’
-কাজী শাহেদ আহমেদ


গতকালের পর
 
আবদুল ওস্তাদ লোক নিজেই লিখেছে ছয় দফার বিরুদ্ধে সে কিছু লেখেনি, আবার লিখছে, ‘‘বঙ্গবন্ধু ছয় দফার প্রতীক হিসেবে ছয়টি কবুতর আকাশে উড়িয়ে দেন, দুটি কবুতর মুখ থুবড়ে পযে যায়।’’ তাই দেখে আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখেছিল। লেখার কায়দা কি। বাহানা কি। কবুতর পড়ে গেছে। তাই আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখেছে। কবুতরের দোষ। আবদুলের দোষ নয়। কবুতর না পড়লে তো আর লিখতো না। তাই ওটা ছয় দফার সমালোচনা নয়। তাছাড়া থাকলে কর্নেল (অবঃ) দেখাক। কর্নেল (অবঃ) তাকেদেখাবে নিশ্চয়ই।তিনি লিখেছেন বঙ্গবন্ধু পরে তোর ছয় দফার বিরুদ্ধে লেখা পড়ে আবদুল লেখাটিতে আসলে কি বলতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারেন। তাহলে আবদুলের ছয় দফার বিরুদ্ধে লেখা একমাত্র অতিকষ্টে বাংলাদেশ হবার পর শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন। আবদুল সব সময় মরা মানুষকে সাক্ষী মানে তার মিথ্যার সত্যতা প্রমাণের জন্যে। বঙ্গবন্ধু নাকি বুঝতে পেরেছিলেন আবদুল ছয় দফার বিরুদ্ধে রাজাকার হামিদুল হকের পত্রিকায় লিখলে ওটাকে ছয় দফার বিরুদ্ধে নয় মনে করে নিতে হবে। আবদুলের সামনে আমরা তেমন কোনো প্রয়াত স্বাক্ষীকে হাজির করতে পারছি না বলে দুঃখিত। তবে তার লেখা হাজির করবো।
৩০-১২-৯৪ ইং তারিখে আবদুল নিজের লেখার থেকে নিজে উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের কাগজের উদ্দেশ্যে বলছে, ‘‘আমার বক্তব্যে কোন অস্পষ্টতা আছে কি?’’ ওস্তাদ লোক। নিপুণ লোক।ঝাড়ফুক তাকতুক করাতে ও বোঝাতেও আবদুলের জুড়ি নিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধার সৃষ্টি হলে বহুদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাজনের সঙ্গীত গেয়ে তিনি লিখছেন- খালেদা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন অতএব তাকে উৎখাত করা যাবে না। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার খাতিরে খালেদাকে স্বপদে রাখতে চেয়েছেন আবদুল। নির্বাচন কমিশন শক্ত করতে বলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতা সংকুচিত করতে বলে আবদুল প্রশ্ন রাখেন তার লেখায়, কোনো অস্পষ্টতা আঝে কি?’’ না নেই। অন্তবর্তী সরকার হবে, খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, সংকুচিত ক্ষমতা দিয়ে, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে, নির্বাচন হবে, পরীক্ষা হবে, হাসিনা সব মেনে নিয়ে পরীক্ষা দেবেন। সব পরিষ্কার। সব ছাপ। আর অস্পষ্টতা নেই বলেই তো সম্পাদকীয় লিখতে হয় আজতের কাগজে। আবদুল লিখেছেন, ‘‘একমাত্র উদ্দেশ্যপরায়ণ ও মতলাববাজ লোক ছাড়া তার ঐ লেখার অন্য কোন অর্থ করা কারো পক্ষে সম্ভব কি?’’ ঠিক লিখেছেন। আমিও যেমন উদ্দেশ্যপরায়ণ মতলববাজ লোক আবদুলও তেমিন উদ্দেশ্যপরায়ণ মতলববাজ লোক। আবদুলের উদ্দেশ্য ও মতলব হচ্ছে এই সংকটে অন্তবর্তীকালীন সরকার হোক। খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকুক। সংকুচিত ক্ষমতা নিয়ে। ইলেকশন কমিশন শক্তিশালী হোক। নির্বাচন হোক। পরীক্ষা হোক। এবং সেই নির্বাচনে সেই পরীক্ষায়শেখ হাসিনা পরীক্ষা দিক। আত্মসমর্পণ করুক। আত্মহত্যা করুক। আর আমি চাই খালেদার প্রধানমন্ত্রীত্বের বাইরে এদেশে নির্বাচন হোক। সেই সাথে যা যা করা লাগে সর্বদলীয়ভাবে সম্মত হয়ে তা করা হোক। নির্বাচন হোক। তিন চার বার ঐ ভাবে নির্বাচন হোক। তাতে জনসাধারণ যে দলকে খুশী জয়ী করুক। দুই মতলববাজের বিচার পাঠক করুক। দেশবাসী করুক। ভবিষ্যৎ করুক। এই আন্দোলনের অনেক মাত্রা আছে। অনেক কারণ আছে। অনেক ব্যথা বেদনা আছে। অনেক ইতিহাস আছে। আর সবকিছুর মধ্যে একটাই দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ কর্তত্বে –নির্বাচন হোক অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে হোক। এবার হোক। আগামী তিন চার বার হোক। এটা সার্বজনীন দাবী। এখানে বোদয় আবদুলকে মিনে করিয়ে দেয়া দরকার কেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে রেখে নির্বাচনে আমাদের ও দেশবাসীর এতো আপত্তি। কারণ তিনি ঐ পদে বহাল থেকে নির্বাচনে কারচুপি করতে পারেন। লন্ডন থেকে হয়তো মাগুরার খবর রাখা কঠিন। তবে দেশের মানুষ সেসব কথা ভালোভাবেই জানে। আবদুলের কথা মানলাম। খালেদা প্রধানমন্ত্রী। কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তবুও ফোন করলেন কুমিল্লার ডিসিকে নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু বলার জন্যে। তখন ডিসি কুমিল্লা থেকে ফোনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা কি বলবে, ‘‘ম্যাডাম আপনার তো এখন নির্বাহী ক্ষমতা নেই। আপনি আমাকে ফোনে নের্দশ দিতে পারেন না।’’ এটা কি সম্ভব? আমরা যারা এখনো এদেশে থেকে (অবঃ) নই, তারা এদেশের বাস্তবতার ব্যাপারেও অবোধ নই। ছয় হাজার মাইল দূরে বসে আবদুল খালেদাকে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে নির্বাচন দেবার কথা বলতে পারছেন না, আর ডিসি, এসপি, ওসি প্রধানমন্ত্রীকে বাধা দেবেন। দূরে বসে মতলববাজ আবদুল খালেদাকে রাখার জন্যে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লেখে তাই আজকের কাগজকে কলম ধরতে হয়েছিলো।আবদুল ইতিহাস ঘাটে তার লেখায় শুধু খালেদাকে ক্ষমতায় রাখার জন্যে, তাই আজকের কাগজকে ইতিহাসের পাতা ঘাটতে হয় আবদুলকে খুঁড়ে বের করতে। এখন বুলডোজার দিয়ে খুঁড়ে বের করা হবে আবদুলের অতীত ইতিহাস। অসুবিধা হচ্ছে কি আবদুলের একই লেখায় টক মিষ্টি ঝাল লবণ মরিচ সব দিয়ে মাখানো এক খিচুড়ি থাকে যা সব দলকে খূশি করে সব দলকে নারাজ করে আর উদ্দেশ্যের, মতলবের কাজটুকু হাসিল হয়ে যায়। কেউ তাকে ধরলে তার পক্ষের লেখাটুকু তুলে ধরে খুশি করে ও বিপক্ষের খারাপটুকু দেখিয়ে দেয়। পটু লোক। কাজে আবদুলের কেরামতি আছে। জানে, কোনা লেখায় ভাল মন্দ থাকলে সবাই নিজের ভালোটা বেছে নেয় ও অন্যের মন্দটা বেছে নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। আবদুল তা জানে। আবদুলের ঐ লেখার টার্গেট ছিলো শেখ হাসিনার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা কিন্তু আবদুল ব্যর্থ হয়েছে। আবদুল লিখেছেন ‘‘কর্নেল (অবঃ) সম্পাদক সম্ভবত নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার।’’ ধরে নেওয়া যাক কথাটি ঠিক। এবং ঠিক হলে তাতে দোষের কি? নতুন লোক কি জন্মাবে না? নতুন লোক কি পার্টিতে যোগদান করতে পারবে না? নতুনদেরকে ‘‘এজেন্ট প্রোভোকেটিয়ার্স’’ বলে শেখ হাসিনাকে সাবধানে থাকতে বলেছেন। শেখ হাসিনাকে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনি আমার থেকেও সাবধানে থাকবেন, আপনি আবদুলের থেকেও সাবধানে থাকবেন। কারণ এই আবদুল মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ স্বাধীন হবার পরে আপনার আব্বাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, হামিদুল হক চৌধুরীর পত্রিকায় কাজ করে ছয় দফার বিরুদ্ধে লিখলে সেটাকে ছয় দফার বিপক্ষে বলে মনে করা যাবে না। এবং আপনার আব্বা আমাদের বঙ্গবন্ধু এই ধরণের আবদুলদের সম্পর্কে সাবধান না হওয়ার কারণে তার ঐ করুণ পরিণতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি ঘটেছিলো। বঙ্গবন্ধুর ঐ ট্রাজিক পরিণতির ক্ষেত্র প্রস্তুতি করণে আবদুলের লেখার অল্প হলেও অবদান ছিলো। আবদুল ’৭২ থেকে শেষ অব্দি নিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লিখে গেছে। সরাসরি লিখেছে। মিত্র সেজে লিখেছে। এবারে আবদুল আমার সম্পর্কে তার লেখায় যে সব ব্যক্তিগত কুৎসা ও অভিযোগ এনেছে সে সম্পর্কে আমার কথা।
লাহোরে পড়াকালে ১৯৬১ তে লাহোরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তার নেতৃত্বে আমিও ছিলাম ফলে তখনকার গভর্নরের আদেশে আরো ছয় জন বাঙালিসহ আমি বন্দী জীবন কাটাই। কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হই। লাহোর হাইকোর্ট-এ রীট করে মামলায় জিতে কলেজে পুনঃপ্রবেশ করি।
তবে একটা শিক্ষা হয়েছিলো যে, রাজনীতি করতে হলে সারপ্লাস ‘নলেজ’ এবং সারপ্লাস ‘মানি’ দরকার। তা নাহলে পরনির্ভর থাকতে হয়। আবদুলদের মতো ধড়িবাজের জীবন যাপন করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ওয়াপদায় তারপর দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে চাকরী করতে করতে আর্মিতে চলে যাই। বাঙালি যাতে আর্মিতে যায় সবাই তখন এনকারেজ করেছেন। তাই আর্মিতে যাই। পাকিস্তানীদের সাথে লড়তে হলে আর্মিতে বাঙালি দরকার সবাই তখন উপলব্ধি করেছেন। আর্মিতে বাঙালি না থাকলে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি ফোর্স পেতাম কোথায় আমরা? সেই আর্মিতে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং করেছি না হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়িয়েছি। আমিই প্রথম বাঙালি ইন্সট্রাক্টার কই বিসালপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আমারই ছাত্ররা এখন বাংলাদেশে আছেন। আদরে মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যন্ত আছেন। সেকি কম গর্বের কথা। কম আনন্দের কথা। আবার বাংলাদেশ আর্মিতে বাংলাদেশ মিলেটারী একাডেমি থেকে পাস করা আমার ছাত্র ব্রিগেড কমান্ড করছে সেকি আনন্দের ও গর্বের কথা নয়? সেখানে আমাকে উর্দিপরাআলা, উর্দির তেজারতি বলা, কর্নেল (অব:) সম্পাদক বলা, লেফট রাইট করা বলা মানে কি? আবদুল কাকে অপমান করতে চায় আর্মিকে, আর্মির পদবীকে, ব্যাংককে নাকি কাজী শাহেদ আহমেদকে? আবদুল চাইলো আর ভোরের কাগজ ছাপলো। প্রকাশক সাবের চৌধুরী আছেন সম্পাদক মতিউর রহমান আছেন ভোরের কাগজে। তারা কি সম্পাদনা করবে না?
আবদুলের অজানা থাকার কথা নয় যে আমিই প্রথম সামরিক বা বেসামরিক অফিসার যে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপ্রধান হবার পরে আর্মি ছেড়ে বেরিয়ে আসি তবুও ইচ্ছা করে তিনি লিখেছেন, “তিনি (শাহেদ) জিয়াউর রহমানের আমলে এবং এরশাদের আমলেও একটা সময় পর্যন্ত আর্মিতে ছিলেন” কথাটা ডাহা মিথ্যা। ব্যাপার আছে, আবদুল ও আবুদলেরা আর্মিকে প্রকাশ্যে একটু সমালাচনা করতে ভালবাসে। গোপনে আর্মিকে সামান্য চাটতে ভালবাসে। তার মধ্যে আর্মিকে “নেপো নেপো” বলে ডেকে ক্ষমতায় আনতে ভালবাসে। আবার অবস্থা বুঝে একটু আধটু সমালোচনা করে বসে। আমি সেই অফিসার যে ২৭ মার্চ ’৭১ সকালে বিসালপুরে বিদ্রোহ করে বসি। আমি লিখে আমার বেতন ছাড়া সব কিছু বন্ধ কের দেই। (প্রমান করার কাগজ আমার হাতে আছে) সাথে সাথে অঘোসিত ভাবে গৃহবন্দী হয়ে পড়ি। এক মনসুর আফজাল ছাড়া কোনো বাঙালি অফিসারকে আমার বাসায় আসতে দেয়া হয়নি। মানা ছিলো। আসেনি। পাঞ্জাবীদের প্রশ্নই আসে না। ক’দিনের মধ্যে কামাল লষ্কর একরামের সাথে খারিয়া দিয়ে পালাবার প্ল্যান করে ফেলি। ব্যর্থ হয়। মাইন লাগায়। কামাল, লষ্কর বলে যার যার ব্যবস্থা করো। বেরিয়ে পিন্ডি হয়ে তখন মেজর মোজাম্মেলের বাড়ি একরাত থেকে পিন্ডি মেষে গাড়ি ফেলে মারী দিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ি। ফেরত নিয়ে যায় বিসালপুরে। আবার গৃহবন্দী হই। কানে আসে যাশোরে খালিশপুরে ফ্যামিলি আমার মাসাকার হয়েছে। আর্মি ঘিরে রাখছে। খবর আসে আগরতলা থেকে ঢাকায় আমার স্ত্রী ছোট ভাই মুক্তিবাহিনীর অপারেশনে এসে এক রাত বাড়িতে থাকতে গিয়ে আমির হাতে ধরা পড়েছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করি। হঠাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ’৭১ আমাকে ১ ঘন্টায় সময় দিয়ে পার্ক দিয়ে লাহোরের ট্রেনে তুলে দেয়া হয় বিসালপুর থেকে। অসুস্থ বউ বাচ্চা পড়ে থাকে। লাহোরে রেল ইস্টিশনে থেকে আমাকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে কাসুর নিয়ে যাওয়া হয়। সব মুখ থমথমে। কেউ কথা বলে না। আবার বন্দী অবস্থা। কর্নেল রশিদ মালেক কমান্ডিং অফিসার সে আমাকে চোখে চোখে রাখে। আস্তে আস্তে পরিস্কার হতে থাকে যে, আমাকে মেরে ফেলা হবে। একদিন সকালে আমাকে বর্ডারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এর মধ্যে জিওসি মেজর জেনারেল মালেক আমার বর্ডারের উপর এসে কথা বলার ছলে ফিসফিস করে বলে যে, ঐ রাতেই যেন বিসালপুর গিয়ে বউ বাচ্চা আনি। টিকেট করে তাদেরকে ঢাকায় পাঠাই এবং নিজে বর্ডার ক্রস করে যেন পালিয়ে যাই। এবার সে আমাকে সেই রাতে বাচাঁলো। সেই সন্ধ্যায় বউ বাচ্চা আনতে বিসালপুরে গিয়ে দেখি না খেয়ে দেয়ে টাকা পয়সা চিঠিপত্র খাবার দাবারবিহীন বন্দী জীবন কাটাচ্ছে আমার স্ত্রী ও অসুস্থ ছেলে। আমাকে দেখে একসাথে দুজনে কেঁদে উঠে। একদিন বাড়ির বাইরে যেতে দেয়নি। শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন মনসুর আফজাল সব অগ্রাহ্য করে মাঝে মাঝে বিকেলে এসে নাবিলকে কোলে নিয়ে ঘুরিয়ে বেড়িয়ে ঠান্ডা করে বাড়ি দিয়ে গেছে। সবকিছু তৈরি দেখে বুঝতে পারি জেনারেল মালেকের অর্ডার। সেই রাতে লাহোর চলে আসি। লাহোরে বোনের বাড়ি এডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ করেঝে এসে আশ্রয় নি। ঢাকায় জানাই ওরা আসছে, ওদেরকে যেন Mitford- এ রাখা হয় অর্থ্যাৎ লুকিয়ে রাখা হয়। ওদের পাঠাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তারপর আবার বর্ডারে যাই। রাত ১ টায় পর কমান্ডিং অফিসারের জীপ ও ড্রাইভার আসে। বাংকারে ড্রাইভার একটা চিঠি হাতে দেয়। পড়ে দেখি লেখা আছে “Pick up nothing, get into Jeep, get lost in Lahore, don’t ask question.”

পরে শুনেছি ঐ রাতে ক্যাপ্টেন সাইফকেও সি ও তুলে নেন। পরে জানি ঐ রাতে আমাদের মেরে ফেলার কথা ছিলো। যুদ্ধের ও পরে প্রায় দুই বছর পাকিস্তানী কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেই বন্দী অবস্থায় কাটে। দেশে ফেরার পর এক সময়ের ভাল বন্ধু জেনারেল মঞ্জুর রাতের পর রাত বুঝিয়ে মাস্টারী করার কথা বলে, বিএমএর কথা বলে, দয়ারামপুরের সেনানিবাসের সার্ভে করার কথা বুঝিয়ে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কথা বলে আমাকে ঢাকায় পাঠায়। মাসাধিককাল পরে ডিউটিতে যোগ দিয়ে দয়ারামপুর সেনানিবাসের সার্ভে কাজ ৭ দিনে সমাপ্ত করে কুমিল্লায় যাই বিএমএ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। বিএমএ (বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি, এখন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারায়) ছিলো বঙ্গবন্ধুর চোখের মনি। ভীষণ গর্বে গর্বিত হয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম পাসিং আউট প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণে করেন। সেই প্রথম বাঙালি অফিসার বাংলাদেশের একাডেমি থেকে পাস করে বাংলাদেশের আর্মির অফিসার হলো। ১৫ আগস্ট ’৭৫- এ বঙ্গবন্ধু মৃত্যুবরণ করেন। তার পরের দিনই বলেছি চাকরি করবো না। বিএমএতে কেউ আমাকে রাখতে পারেনি। ঢাকায় চলে আসি। রিজাইন করি। জোর করে আমাকে আর্মিতে রাখা হয়। এবং বলা হয় নেভাল হেডকোয়ার্টারে বনানীতে তৈরী দিলেই ছেড়ে দেয়া হবে। এদিকে জিয়া সাহেব পায় পায় এগিয়ে যান। সায়েম সাহেবের মাধ্যমে নির্বাচন না দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন। প্রথমে ভাঙ্গা শুরু করেন সাংবিধান। সাল ‘৭৭। এতটুকু দেরি না করে আবার রেজিগনেশন দেই। জিয়া সাহেবের অর্ডার কেউ চাকরি না করতে চাইলে ধরো, অ্যারেস্ট করো, ভয়ভীতি দেখাও, না হলে ডিসমিস করে দাও। আর্মিতে জিয়ার ত্রাসে সবাই কম্পমান। খবরদার আর্মি থেকে চাকরি ছাড়ার কোনো কেস পাঠাবে না। আমাকে পাঠালো রংপুর। গিয়ে জিওসি মেজর জেনারেল আমজাদ আহমেদর চৌধুরীর সামনে হাজির হয়ে বললাম, “kill me, cook me, Call me. I will not serve in this Army.”  আমি ছিলাম  3 Engr, Bn 11 Div.- এর কমান্ডিং অফিসার। জেনারেল যা করার তাই করলেন। লাল টেলিফোন তুলে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে জানালেন যে, তার ব্যাটালিয়ান কমান্ডার বিদ্রোহ করেছে। যা শুনার আমার সামনেই শুনে তিনি বললেন, ``consider you are under open arrest.’’ কোথাও যেন না যাই কারণ জিয়া এরশাদকে পাঠাচ্ছেন। পরের দিন সকালে হেলিকপ্টার করে এরশাদ রংপুর এসে হাজির। বিকেলে টেনিস খেলা হলো। আমি আর ইমতিয়াজ একদিকে, অন্যদিকে এরশাদ ও আমজাদ। রাতে নৈশভোজ। সামনে বসা আমজাদ এরশাদ, আমি পেছনে। হঠাৎ এরশাদ জোরে জোরে জেনারেল আমজাদকে জিঙ্গাসা করলো, ``How is he as an officer?” জেনারেল আমজাদ উত্তর দিলেন “The best”। আরো বললেন, আর্মি ছেড়ে গেলে দেশের লাভ হবে। দেশের কাজ হবে। এরশাদ আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলো “You don’t want to serve in the Army?” বললাম ‘না’। এরশাদ হাত বাড়িয়ে বললো, “Farewell to Arms.” আমি প্রথম অফিসার যে Civil Military Service থেকে ইস্তফা দিয়ে retirement নিয়ে বের হতে পেরেছি জিয়ার প্রেসিডেন্ট হবার সাথে সাথে। ঐ ঘটনা ‘ইনকিলাব’ অন্য রকম লিখেছিলো। আমি মামলা করেছিলাম। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারধীন। আব্দুল সম্ববত ইনকিলাব পড়ে আমার সৈনিক জীবন সম্পর্কে অসত্য তথ্য পরিবেশন করেছেন তার লেখায়।
আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আবদুল পাশে এসে দাঁড়াতে দেরি করেননি বলে নিজেই লিখেছেন। “আবার আওয়ামী লীগের সুদিনে তার ভুলভ্রান্তির কঠোর সমালোচনা করেছি” এটাও লিখেছেন আবদুল। কি সাংঘাতিক লোক। আওয়ামী লীগের সুদিন আসলেই সে আওয়ামী লীগের ‘ভুলভ্রান্তি’ দেখে। এমনকি এমন লেখা লেখে যার প্রেক্ষিতে অনুপ্রাণিত হয়ে জাসদ লিফলেট আকারে হাজার হাজার কপি আর্মিতে বিলি করে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সুদিনে আব্দুল তার নিজ পত্রিকা জনপদে দিনের পর দিন ও তার সরকার এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে সব উদ্দেশ্যমুলক রচনা প্রকাশ করেছিলো সেগুলিই সামরিক ছাউনিতে ’৭৫-এর ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করেছিলো। আবদুল লিখেছেন, “অপরীক্ষিত নতুন মিত্রের চেয়ে পরীক্থিত পুরানো শত্রু ভালো।” মানে কি? পরীক্ষিত পুরানো শত্রু যেমন গোলাম আযম, মতিউর, আব্বাস, রশিদ, মোশতাক, ডালিম, ফারুক সব ভালো অপরীক্ষিত নতুন মিত্র কাজী শাহেদ থেকে? না তা হয় না। প্রবাদ শুনতে ভালো লাগলেও সব সময় সত্যি হয় না। নতুন মিত্রকে বার বার পরীক্ষা করা হবে। যাচাই করা হবে। দেখা হবে। তাতে উত্তীর্ণ হলে তখন অপরীক্ষিত নতুন মিত্র পরীক্ষিত মিত্রে পরিণত হবে। আর যারা পরীক্ষিত পুরানো শত্রু তাদের বিচার হবে, হাজত হবে, জেল হবে, ফাঁসী হবে ন্যায় নীতি এটাই দাবি করে। ধুকে ধুকে মরবে। আবদুল নিজেই বলুক সে পরীক্ষিত বন্ধু নাকি পরীক্ষিত শত্রু?
আবদুল লিখেছেন, “অপরীক্ষিত নতুন মিত্রের চেয়ে পরীক্ষিত পুরানো শত্রু ভালো।” মানে কি? পরীক্ষিত পুরানো শত্রু যেমন গোলাম আযম, মতিউর, আব্বাস, রশিদ, মোশতাক, ডালিম, ফারুক সব ভালো অপরীক্ষিত নতুন মিত্র কাজী শাহেদ থেকে? না তা হয় না। প্রবাদ শুনতে ভালো লাগলেও সব সময় সত্যি হয় না। নতুন মিত্রকে বার বার পরীক্ষা করা হবে। যাচাই করা হবে। দেখা হবে। তাতে উত্তীর্ণ হলে তখন অপরীক্ষিত নতুন মিত্র পরীক্ষিত মিত্রে পরিণত হবে। আর যারা পরীক্ষিত পুরানো শত্রু তাদের বিচার হবে, হাজত হবে, জেল হবে, ফাঁসী হবে ন্যায় নীতি এটাই দাবি করে। ধুকে ধুকে মরবে। আবদুল নিজেই বলুক সে পরীক্ষিত বন্ধু নাকি পরীক্ষিত শত্রু?
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
আবদুল লিখেছেন, “পরে কাজী শাহেদ আহমেদ হয়েছেন ‘প্রগতিশীল সম্পাদক’ এবং এখন সম্ভবত নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার। তিনি আওয়ামী লীগকে শান্তি ও সমঝোতার পথে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে সাহায্য না করে কাদের স্বার্থে বা কোন মহলের ইঙ্গিত বিরোধী দলগুলোকে তাদের আন্দোলনের অতি হিতৈষী সেজে সংঘাত ও রক্তপাতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে খবরটা আবদুলের ভোরের কাগজের লেখা থেকে জেনে কৌতুক অনুভব করলাম। অর্থ্যাৎ আবদুল বলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচন করলে রক্তপাত ও সংঘাত হবে না আর আমার কথা মতো প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া             আগামী নির্বাচন ও পরবর্তী তিনটি বা চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করলে রক্তপাত হবে। সংঘাত হবে। কি যুক্তি। কি তর্ক। কি চিন্তা। কি সৎ চিন্তা। কি হিতৈষী। আবারো বলছি আবদুল ‘মতলববাজ’, আমিও ‘মতলববাজ’। তিনি চান খালেদার অধীনে নির্বাচন হোক সর্বদলীয় সরকারের মাধ্যমে। আর আমি চাই খালেদা বাদে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক এবার ও পরের তিন চারটি নির্বাচন। অতএব আমার সনির্বদ্ধ অনুরোধ শেখ হাসিনার কাছে, সকল মতলববাজ থেকে সাবধান থাকার। আবদুল লিখেছেন “আমার বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে শদ্ধা করতেন।” বয়স আমার তার থেকে একটু কম নয়। অনেক কম। এক প্রজন্ম কম। আপনি এক প্রজন্মের আমি আর এক প্রজন্মের। তা আমার প্রতি তার শ্রদ্ধা এক লেখার এক সমালোচনায় উবে গেলো? রহস্যটা কি?

সমালোচনা উবে গেলো? রহস্যটা কি?
আবদুল লিখেছেন, “যারা এমপি হওয়ার নমিনেশন লাভ এবং ভবিষ্যতে মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বর্তমানে উর্দি ছেড়ে আলোয়ান গায়ে সাংবাদিক অথবা নবদীক্ষিত আওয়ামী লীগার সেজেছেন, তাদের কাছে আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।” আবদুল যা লিখেছেন সেই কথাগুলোর তাৎপর্য কি তিনি উপলব্ধি করেন তিনি কি চান যে, যারা উর্দি পরেন তারা উর্দি ছেড়ে বিবস্ত্র জীবন যাপন করবেন। পাজামা কুর্তায় শার্টে প্যান্টে- পরে উর্দিতে আর্মিতে। আর্মিতে উর্দি পরতে হয়। লুঙ্গি পাজামায় হয় না। আবার আর্মি ছাড়লে উর্দি পরা যায় না। উর্দি ছেড়ে যা ইচ্ছা পরা যায়। তবে শীত লাগলে আলোয়ান গায়ে দেয়া যায়। এর কোনটায় কোনো অসুবিধা দেখছি না। তাতে আবদুলের আপত্তি কোথায়। সে কি সমস্ত অবসর প্রাপ্তদেরকে বিবস্ত্র দেখতে চায়? এমন তো না যে, কাজী শাহের আহমেদ উর্দি পরলে উর্দি খারাপ আর নুরউদ্দিন পরলে তা ভালো। সাংবাদিক লেখক কবি ঔপন্যাসিক গল্পী হওয়ার জন্যে আবদুলের অনুমতি লাগবে নাকি। আমি তো জানি, যে কেউ যে কোন বয়সে গুণ থাকে তো একজন কবি বা সাংবাদিক বা ঔপন্যাসিক হতে পারে। আমি যখন সাংবাদিক হই এরশাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে, আবদুল তখন এরশাদের পক্ষে কলম চালাচ্ছে। আবদুল তার লেখায় এমপি, মন্ত্রী হওয়া সম্পর্কে আমাকে খোচা মেরেছে তাই এবার নমিনেশন, এমপি হওয়া ও মন্ত্রী হওয়া সম্বন্ধে লিখছি। এর কোনটাতে আমার আপত্তি নেই। সেংকোচ নেই। ক্ষমতায় যেতে লজ্জা কিসের? ভীষণ খুশি হবো নামিনেশন পেলে, আরো খুশি হয়ে জনগন এমপি বানালে এমপি হবো এবং মন্ত্রী বানালে মন্ত্রী হবো। তবে তার চেয়েও বেশি খুশি হবো। যদি আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং সেই নির্বাচনের জোয়ারে ৭০ সালের মত জয় বাংলার নৌকা তরতর করে এগিয়ে যায় এবং আমরা আমাদের জাতিসত্তা আবার ফিরে পাই।
-   আগামীকাল তৃতীয় কিস্তি। কাজী শাহেদ আহমেদ: সম্পাদক, আজকের কাগজ।

আবদুলের অবগতির জন্য কিছু কথা



‘‘কাছে দূরে ঘুঘু চরে, ফাঁদে পড়ে নাঃ ফাঁদ পেতেছি, বাঁধ বেঁধেছি, ছাড়া পাবে না’’
-কাজী শাহেদ আহমেদ
গতকালের পর

অতএব আওয়ামী লীগের সুদিনে দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো। আবদুল গাফফার চৌধুরীরর মতো আওয়ামী লীগের সুদিনে ভুলভ্রান্তি লিখে কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগকে আনপপুলার করে জাসদ আর্মি সারাদেশের সবাইকে লেখা দিয়ে ক্ষেপিয়ে নেতা হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করবো না এবং হত্যা হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের ট্রাজেডির পর দলের পাশে গিয়ে আবার বন্ধু সাজবো না। যেমন আব্দুল করেছিল।ফলে আওয়ামীলীগাররা আবদুলের নামে গদগদ হয়ে থাকলো।বুঝলো না আবদুলের হাতসাফাই ও তার লেখা ’৭৫-এর পটভূমিকা নির্মাণে সহায়তা করেছিল কীনা? স্বাধীনতাপূর্ব ও উত্তর আবদুলের লেখাগুলো পাঠ করলে তাকে খন্দকারের মুরিদ মনে না হয়ে পারে না।
স্বাধীনতার পর দেশে মুজিবনগর প্রথ্যাগত উল্লেখযোগ্য প্রত্যেকেই কোন না কোন উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব পেয়েছিল যেমন সম্পাদকের দায়িত্ব বা আমলা বা রেডিও টেলিভিশনের দায়িত্ব কিন্তু আবদুল পায়নি বা দেওয়া হয়নি এবং এই প্রসঙ্গে আবদুল লিখেছে যে, তার পূর্বদেশের সম্পাদক হবার কথা ছিল কিন্তু প্রয়াত্‌ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী তা দখল করে। প্রশ্ন হলো একাত্তরের রাজাকার পাকিস্তানের পলাতক হামিদুল হক চৌধুরীর পূর্বদেশ পত্রিকায় স্বাধীনতার পরেও হামিদুল হক চৌধুরীর চেলা আবদুলকে বয্গবন্ধু সরকার কিভাবে সম্পাদক নিযৃক্ত করবেন। সে জন্য এহতেশাম হায়দার চৌধুরী মুজিবনগর না গিয়েও পূর্বদেশের সম্পদক হতে পেরেছিল কিন্তু মুজিবনগর যাওয়া সত্ত্বেও আবদুলেকে বঙ্গবন্ধু সেই দায়িত্ব দেননি।  তাই সে দৈনিক জনপদ বের করে এবং তাতে ধারাবাহিকভাবে সুকৌশলে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে শুভানুধ্যায়ীর ছদ্মবেশে কলম চালায়। যে কলম আসলে ছিল ছুরি। জনপদে ও পূর্বদেশে তারলেখায় আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে সামনা সামনি কোলাকোলি কিন্তু পিছন থেকে ছুরি মারা হতো।
আবদুল লিখেছেন, ‘‘তিনি ইতিহাসের মহানয়কের সান্নিধ্য, স্নেহ ও ভালবাসা লাভ করেন।’’ বিনিময়ে আবদুল কি দিয়েছেন? বিনিময়ে ইতিহাসের মহানায়কের জীবদ্দশায় ব্যক্তি মুজিবের প্রশংসার ছলে তার সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরামহীন লেখনী পরিচালনা করেন।
আবদুল বঙ্গবন্ধু সরকারের গোড়া কেটে ‍দিয়ে মাথায় পানি ঢালছিলেন। ইতিহাসের মহানায়কের মৃত্যুর পর আবার একদিকে আবদুল প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লিখে আওয়ামীলীগের কাছে ভঅল হয়েছে এবং জিয়া ও এরশাদের দৃষ্টিতে পড়েছে। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সুদিন দেখা দেয়ায় আবদুল খালেদাকে ক্ষমতায় রেখে শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে যাবার জন্যে খোঁচাখোঁচি শুরু করেছে। দ্রষ্টব্য, গতকালের ভোরের কাগজে আবদুলের লেখা। আবদুল সাংঘাতিক লোক। খালেদাকে একসাথে ক্ষমতায় রাখছেন আবার খানিকটা সমালোচনা করে নিচ্ছেন। পরে যদি তাকে কেউ ধরে খালেদার দালাল বলে তখন একই লেখা থেকে দুলে ধরে আবদুল বলবে খালেদাকে আমি ছাড়ি নাই। সাংঘাতিক সমালোচনা করেছি। করিনি? ধুরন্ধর লেখক। তা বঙ্গবন্ধু তাকে এতো ভালবেসেছিলেনতার প্রতিদানে গত ২০ বছর তিনি তার আত্মজীবনূ নিয়ে বসে থাকলেন ও মূলা হিসেবে ব্যভহার করেছেন অথচ প্রকাশ করলেন না। কিসের ভয়? কেন করেননি। বিদেশে থেকেও ভয়। রহস্যটা কি? সেই মহানায়কের ব্যক্তিগত সেন্হ ও সাহায্য পেয়ে জীবনের গৌরব নিয়ে তার আত্মজীবনী প্রকাশে ক্ষান্ত থাকলেন? আবদুল কেমন বঙ্গবন্ধু ভক্ত?
আবদুল তৃতীয় দফায় ৩১-১২-৯৪ তারিখে আজকের কাগজকে গাঁজার নৌকায় বসিয়েছেন। ভোরের কাগজের মতিউর সেই নৌকা মহা আনন্দে ঠেলে দিয়েছে। আবদুল নৌকাটা কার তা বলেননি। নৌকাটার মালিক আবদুল না সাবের চৌধুরী? নিজেই সে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়ে আবার নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলে, দেখান কবে আমি অমুক লেখা লিখেছি, ‘তমুক কথা বলেছি। আবদুল চায় word for word হতে হবে। আবদুল ঘুঘু দেখেছে, আবদুল ঘুঘূর ফাঁদ দেখেনি। তার ব্যবস্থা হবে। নতুন বাংলার অস্তিত্ব ঠিক সেই সময় ছিল না কথাটি ঠিক, তারমানে এই নয় যে, আবদুলের লেখার অস্তিত্ব নেই। তিনি কি এরশাদের পক্ষে বিলেতের কোন পত্রিকায় লেখেনি? আবদুল লিখেছে ‘‘ এরশাদের পতনের পর জেনারলে নূরউদ্দীনকে অন্তর্ভুক্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব কেন জানাবো, তা আমার বুদ্ধি বিবেচনায় এখনো আসছে না। কর্নেল (অবঃ) সম্পাদক এতো বড় ‘তথ্যটি’ আবিষ্কার করলেন কিভাবে? দয়া করে আমার এই লেখাটি কোন কাগজে, কবে প্রকাশিত হয়েছিলো; দয়া করে তার পাঠকদের জানাবেন কি?’’ তারপর আমাকে আর সুযোগ না দিয়েতিনি নিজেই লিখেছেন, ‘‘যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্যে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমি নিজের নতুন দেশ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। লিখেছিলাম তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে সামরিক বাহিনী এখনো একটি রাজনৈতিক শক্তি।’’ যে সময়ের কথা আবদুল বলছে সে সময় আর্মির প্রধান ছিলেন নূরউদ্দীন আর আবদুল সেই শক্তি অর্থাৎ আর্মিকে গণতন্ত্র রক্ষার ভূমিকায় ব্যভহার করতে চেয়েছেন। এখন পাঠকবৃন্দ বিবেচনা করুন যখন জেনারেল নূরউদ্দীন সেনাপ্রধান তখন সেনাবাহিনীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ কি? তার অর্থ কি সেই সরকারে নুরুউদ্দীনকে ঢোকানো নয়? বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের তত্ত্বাবধায় সরকারে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিত্বের জন্য ওকালতির অর্থ কি প্রকারান্তরে সেনাবাহিনীর দালালি নয়? সৌভাগ্যক্রমে আর্মি আবদুলের দালালি উপেক্ষা করেছে।
আবদুল লিখেছেন, “সামরিক বাহিনী এখন একটি রাজনৈতিক শক্তি।” এরুপ ভুট্টো বলেছিলো বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় না যেতে দেবার জন্য ১৯৭১-এ। ভুট্টো নেই। আবদুল আছে। একই কথা বলার লোক আছে। আবদুল আরো লিখেছেন, “এই শক্তিকে (আর্মিকে) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করার ভুমিকায় প্রশংসা করেছিলাম এবং লিখেছিলাম সেনাবাহিনীর এই ভুমিকা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে সফল হতে সাহায্য করেছে। আবদুল মোসাহেবী গল্প ফেঁদে বসতে ওস্তাদ। গল্পের বাহার আছে। যদিও সারবস্তু কিছু থাকে না। আর্মিতে থেকেই এরশাদ ক্ষমতা নিলো আর বিএনপি সাত্তার ক্ষমতা দিলো তারপর রয় বছর এরশাদ আর্মির সহায়তায় ক্ষমতায় থাকলো। তারপর আন্দোলনের মাথায় একঝাঁক নতুন ফসলের তরুন আর্মি অফিসার বেঁকে বসলে নুরউদ্দীন শুধু কথাটাকে এরশাদকে জানালো এবং সেই সব কথার একটা বাজারী গল্প চায়ের দোকানে ছড়িয়ে পড়লে আবদুলের কানে যায় এবং তার ভেতের নুরউদ্দীনের ও আর্মির মাহাত্ম্য খুঁজে বের করে আবদুল নুরউদ্দীনের ও আর্মির পিঠে চাপড়ালো। চাপড়াচ্ছে। এইত ঘটনা। আবদুল আরো লিখেচেন প্রশ্ন করে, “সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল নুরউদ্দীনকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে গহণ করলে অন্যায়টা কি হতো?” এ প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো না, পাঠকরাই খুঁজে নিবেন ও আবদুলকে বুঝে নিবেন। আর্মির কাজ আমি করবে রাজনীতিবিদদের কাজ রাজনীতিবিদরা করবে আর সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করবে। এই সীমা লংঘিত হলেই নৈরাজ্য। যার জন্য ওকালতি করছে আবদুল। সেদিন যদি আবদুলের পরামর্শ মত নুরুউদ্দীনকে শাহাবুদ্দিনের সাথে রাখা হতো তাহলে এরশাদ বিচারপতি সাত্তার বিতাড়নের পুনারাবৃত্তি হতো তা কি কেউ বলতে পারে? আবদুল তারপর লেখে “জেনারেল নুরউদ্দীন তো এমনিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অঘোষিত উপদেষ্টা ছিলেন।” এ খবর আবদুল কোথায় পেলো? অবশ্য আবদুলের এক গাঁজার নৌকা আছে তাতে নিজেই চড়ে নদী পাহাড়া পর্বত বন জঙ্গল গুহা ও সাত সমুদ্র তের নদী সব পার হয়ে ঐ খবর সংগ্রহ করেছে। লিখেছেন নিজে আর চাপ দিচ্ছেন আজকের কাগজকে স্বীকার করতে যে, “ভবিষ্যতেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন করতে হয় তাহলে সেই সরকারেও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থন সহযোগিতা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির এই বাস্তবতা কি আজকের কাগজের সম্পাদক অস্বীকার করতে পারেন?” আশ্চর্য লোক। নিজে একটা থিসিস দিচ্ছে আর আমাকে চাপ দিচ্ছে তা স্বকিার করে নেবার জন্যে। আমি আজকের কাগজের সম্পাদক হিসেবে মনে করি যে এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হামিদুল হক চৌধুরীর পাকিস্তান নয় যে জেনারেল টিক্কার লেজ ধরে শ্রীলংকা হয়ে পাকিস্তানে হিজরত করবেন। আবদুল আমি আর্মি থেকে অব: তবে বোধযুক্ত সাংবাদিক আর আপনি আবদুল গাফফার চৌধুরী আর্মি থেকে অব: নন এবং আর্মি সম্বন্ধে অবোধ এবং ভারবাহী। আবদুল লিখেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি লন্ডনে বসে (ঢাকায় না) কলমযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। কার সঙ্গে? লিখে তিনি আওয়ামী লীগের প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাথে আবার তা দেখিয়ে শাসিয়ে ফাঁসিয়ে যা যা পাওয়া যায় উল্টো ক্যাম্প অর্থ্যাৎ জিয়া এরশাদের ক্যাম্প থেকে হাতিয়েছেন এই আবদুল। আবদুল লিখেছে মতিউর রহমানের ভোরের কাগজের মাধ্যমে যে, “আজকের কাগজের মতো অন্যের বিরুদ্ধে একগাদা মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রচার চালাইনি।” তাহলে ভোরের কাগজ, প্রকাশক সাবের চৌধুরী, সম্পাদক মতিউর রহমান এবং তার ঐ উক্তির মাধ্যমে বলতে চান আজকের কাগজ গোলাম আযম, মতিউর, সাকা, ইয়াহিয়া, ভুট্টো, সবুর, শাহ আজিজ, আলীম.... সম্বন্ধে যা যা লিখেছে সব মিথ্যা ও বানোয়াট। আজকেরদ কাগজ আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সপক্ষের লোকদের সম্বন্ধে যা যা লিখেছে, যে যে আন্দোলনে সহায়তা করেছে, যে যে নিবিড় কথা আবার জনগণের মুখে তুলে দিয়েছে যেমন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু..... সব মিথ্যা বানোয়াট?
একই লেখায় ড: কামালকে খুশি করেছেন, তুলো ধুনেছেন, ঝেড়েছেন আবার তার সম্বন্ধে ওকালতি করেছেন। লিখেছেন, “তিনি (ড: কামাল) আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে না গেলে তার নিজের এবং আওয়ামী লীগের ভাল হতো একথাও আমি বার বার বলেছি।” কেমন সাংবাদিক এই আবদুল। কেমন চিন্তা তার। উদ্দেশ্যে কি? আবদুল কি জানে যে, ড: কামাল আওয়ামী লীগের কি সর্বনাশ করছিলেন? আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগকে ড: কামাল বাঁচিয়েছেন, নিজেও বেঁবেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে আবদুল আওয়ামী লীগের পুরাতন ফকির হয়েও অনেক কিচু জানেন না এবং জানলেও না জানার ভান করে ওকালতি করেন। দেখা যাচ্ছে, নতুন জ্ঞানী বন্ধু পুরাতন পাপী বন্ধু থেকে অনেক শ্রেয়। আবদুল জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, সমন্বয় কমিটি, আন্দোলন, শেখ হাসিনা,
টীকা: একই লেখায় ড: কামালকে খুশি করেছেন, তুলো ধুনেছেন, ঝেড়েছেন আবার তার সম্বন্ধে ওকালতি করেছেন। লিখেছেন, “তিনি (ড: কামাল) আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে না গেলে তার নিজের এবং আওয়ামী লীগের ভাল হতো একথাও আমি বার বার বলেছি।” কেমন সাংবাদিক এই আবদুল। কেমন চিন্তা তার। উদ্দেশ্যে কি? আবদুল কি জানে যে, ড: কামাল আওয়ামী লীগের কি সর্বনাশ করছিলেন? আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগকে ড: কামাল বাঁচিয়েছেন, নিজেও বেঁবেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে আবদুল আওয়ামী লীগের পুরাতন ফকির হয়েও অনেক কিচু জানেন না এবং জানলেও না জানার ভান করে ওকালতি করেন। দেখা যাচ্ছে, নতুন জ্ঞানী বন্ধু পুরাতন পাপী বন্ধু থেকে অনেক শ্রেয়। আবদুল জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, সমন্বয় কমিটি, আন্দোলন, শেখ হাসিনা, আজকের কাগজ, কাজী শাহেদ আহমেদ এসবের কোনো কিছুই জানে না। অজ্ঞ লোক। তাই ড: কামাল দিয়ে জাহানারা ইমামের শূন্য স্থান পুরন করতে চেয়েছেন। তার এই ডাক অজ্ঞ ও উদ্দেশ্যপরায়ণ ডাক। গাঁজার নৌকায় বসে হাজার হাজার মাইল দুর থেকে লিখলে এমনি হয়।

আজকের কাগজ, কাজী শাহেদ আহমেদ এসবের কোনো কিছুই জানে না। অজ্ঞ লোক। তাই ড: কামাল দিয়ে জাহানারা ইমামের শূন্য স্থান পূরণ করতে চেয়েছেন। তাই এই ডাক অজ্ঞ এবং উদ্দেশ্যপরায়ণ ডাক। গাঁজার নৌকায় বসে হাজার হাজার মাইল দুর থেকে লিখল এমনি হয়। রাজনীতি চলমান স্বীকার করি কিন্তু আবদুলের সে রাজনীতির রাজ বাস দিয়ে নীতি চলমান এটা এখন সবাই জানে। আজকের কাগজের সম্পাদক সারাজীবন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নীতির ব্যাপারে “বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর সংবিধান”- এর ব্যাপারে লেফট রাইট করবে। আর আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ জানে যে, আবদুল লেফট রাইট করার লোক নন। আবদুল যখন যা করলে লেফট ও রাইট পকেটে দু’চার পাউন্ড পড়ে তাই করেন। আবদুল কখনো লেট টার্ন অথবা কখনো রাইট টার্ন করবে। আবদুল তার গাঁজার নৌকার পাশ হাওয়া বুঝে তুলেন। লেফট রাইট করে কিছু হারাতে চান না। তিনি উর্দি কোনোদিন পরেননি তবে উর্দিওয়ালাদের চাটুকারিতায় ওস্তাদ ছিলেন, আছেন ও থাকবেন তা তার লেখায় সগর্বে সশব্দে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। আবদুল লিখেছেন, “সশস্ত্র মস্তান ভাড়া করে এনে পত্রিকার ব্যক্তি মালিকান রক্ষা করিনি।” আবদুলের নতুন মালিক ভোরের কাগজের সম্পাদক মতিউর রহমান যখন অজ্ঞাত জায়গা (আমি জানি জায়গা কোনটি) থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা এনে অফিস নিয়ে পুরো পত্রিকা বের করার যন্ত্রপাতি কিনে বসে কোন সংস্থার ইঙ্গিতে আজকের কাগজ বন্ধ করে ভোরের কাগজ বের করার জন্যে পুরো প্রস্তুত তখন আবদুল কোথায় ছিলেন? সেই সম্পর্কে আবদুল নীরব কেন? তাই আমি কাজী শাহেদ আজমেদ একাই পত্রিকার ব্যক্তিমালিকানা রক্ষা করি। সশস্ত্র হওয়া লাগেনি, মাস্তান লাগেনি, ভাড়া করা লাগেনি। ওসব আবদুলদের লাগে। আবার দরকার হলে ব্যক্তিমালিকানা পত্রিকার বা মালিকানা সে দেশের হোক, পতাকার হোক, জাতীয় সঙ্গীতের হোক, চেতনার হোক আমি রক্ষার জন্য যুদ্ধ করবো। আবার বলছি ``An old soldier never dies.”